হরিনাকুন্ডু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সেবা গ্রহীতারা। এইসব দলিল লেখকরা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে জানা যায়। অথচ খাতা কলমে এই সমিতির কোন অস্তিত্বই নেই। জানা যায়, সমিতির মাধ্যমে
জমি রেজিস্ট্রির যাবতীয় খরচের টাকা আদায় করা হয়। সাধারণ দলিল লেখকরাও তথাকথিত এই সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো জমি রেজিস্ট্রি করতে পারেন না কেউ।
এ অবস্হায় সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারন দলিল লেখকরা।
অভিযোগ রয়েছে সাব রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে সমিতিভুক্ত দলিল লেখকরা সরকারি নির্ধারিত ফিসের চেয়েও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। পরে সেই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছেন।
এ অবস্হায় সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিছু দলিল লেখক রাজনৈতিক ও সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমিতির নামে টাকা কামিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। জানা যায়, দলিল লেখক ওয়াজেদ আলী আব্দুল খালেক ও লিটন কমিশনার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে এবং ইকতিয়ার উদ্দীন সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে সমিতির নামে দিনের পর দিন রেজিস্ট্রি অফিসকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে হরিণাকুন্ডু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমি দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। সমিতির অনুমতি ব্যতিত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোন জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে অভিযোগ আছে।
সমিতি গ্রীন সিগন্যাল দিলে দলিল পাঠানো হয় সাব রেজিস্ট্রারের টেবিলে। সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা দলিল লেখকের মাধ্যমে জমি ক্রেতার নিকট থেকে আদায় করা হয়। কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-
রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত। লেনদেনে মধ্যস্থতা করেন দলিল লেখক সমিতির নেতারা।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এখানে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন!দলিল সম্পাদনের নামে দিনের পর দিন অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুসের মাধ্যমে চলছে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ। এখানে ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকার নির্ধারিত রেজিষ্ট্রেশন ফিস, স্ট্যাম্প শুল্ক, স্হায়ীয় সরকার কর, উৎস কর,এন ফিস, দলিল লেখকের ফি প্রভৃতির বাইরেও অতিরিক্ত টাকা প্রকাশ্যে আদায় করছেন।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক রয়েছেন ৭২ জন। এদের মধ্যে ৬৬ জন সমিতিভুক্ত। দলিল রেজিস্ট্রি করতে ফি সংক্রান্ত সরকারী নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চটকাবাড়িয়া মৌজায় ৪ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করতে ১২ লক্ষ টাকার দলিলে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২৮ হাজার পাঁচশত টাকা বেশি নিয়েছে দলিল লেখক আকরামুল রতন। সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের বড়বাবু নেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা। হরিশপুর গ্রামের আবুল কালামের নিকট থেকেও একইভাবে ৩৪ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হয়। সমিতির চাঁদাসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হলেও দেয়া হয়না কোনো রশিদ। সপ্তাহ শেষে সমিতির দলিল লেখকরা এ টাকা ভাগাভাগি করে নেন।
প্রতি সপ্তাহে দলিলের সংখ্যাভেদে একজন দলিল লেখক নুন্যতম ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার ভাগ পান বলে অফিস সূত্রে জানা যায়। সে হিসেবে সমিতির নামে দূর্নীতির মাধ্যমে সংগৃহীত এই টাকার মোট পরিমান দাড়ায় মাসিক নুন্যতম ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার এবং বাৎসরিক প্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। কোন রাখঢাক না রেখেই দলিল লেখকরা বছরের পর বছর এই দূর্নীতি চালিয়ে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নিতে দেখা যায়নি। উপজেলার মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা উঠলেও রহস্যময় কারনে পরে তা চেপে যান সবাই।
আইনানুযায়ী লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এই ঘুষ বানিজ্য চললেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্হা নিতে দেখা যায়নি। ফলে ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে এই উঠেছে দলিল লেখকরদ
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক জানান, সমিতির কার্যক্রম দির্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সমিতির নামে বাড়তি কোনো টাকা নেয়া হয়না বলে জানান তিনি। তবে পারিশ্রমিক বাবদ কিছু টাকা নিয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেন। যা সপ্তাহ শেষে দলিল লেখকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার (এসআর) মেহেদী আল ইসলাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম অস্বীকার করে বলেন, ‘সমিতির নামে জিম্মি করে দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। সমিতির বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।