কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চলতি আমন মৌসুমে সব ধরনের সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বস্তা সার কিনতে ২০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ভরা মৌসুমে সারের এই সংকটে দিশাহারা হয়ে পড়ছে কৃষক। কৃষি বিভাগের দাবি, সারের কোনো সংকট নেই, সারের দাম বেশি নিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় আট হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবহাওয়া ভালো থাকায় আমন ধান রোপণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আমন চাষের জন্য উপজেলার মোট চাহিদা ৬৭০ টন সারের পুরোটাই পাওয়া গেছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে।
চলতি আমন মৌসুমে চারা রোপণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ধান ক্ষেতের পরিচর্যা। চারা রোপণের ১৫-২০ দিনের মধ্যে জমিতে সার দেওয়ার প্রয়োজন হলেও বর্তমানে সার সংকটের কারণে জমিতে সার দিতে পারছেন না কৃষকরা। ভরা মৌসুমে এই সার সংকটে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন এলাকার কৃষকরা। সৃষ্ট সংকটের কারণে খোলা বাজারে সব ধরনের সার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৭৫০ টাকার এমওপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, টিএসপি এক হাজার ১০০ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, ৮০০ টাকার ডিএপি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ সাড়ে ৯০০ টাকায়; আর এক হাজার ১০০ টাকার ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে ৬০০ টাকায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে চড়ামূল্যে সার এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান।
এদিকে সারের সংকট ও দাম বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করছেন অনুমোদিত সারের ডিলার ও কৃষি বিভাগ।
উপজেলার শরিফেরহাট খন্দকারপাড়া এলাকার কৃষক সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছেন, অনেক কষ্টে তিনি দুই বস্তা ইউরিয়া জোগাড় করতে পারলেও আর কোনো সার পাচ্ছেন না তিনি।
পাত্রখাতা স্লুইচগেট এলাকার ঢেপু আহমেদ ও নবাব আলী জানান, ১০-১২ দিন পূর্বে তারা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। বৃষ্টিপাত না থাকায় জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে তাদের। আবার সামনে তাদের জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে, সারের সংকট দেখে হতাশায় ভুগছেন তারা।
খরখরিয়া এলাকার কৃষক তছলিম উদ্দিন জানান, তিনি সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। সার ডিলাররা দুজন কৃষক মিলে একটি বস্তা দেন। তিনি অন্য ব্যক্তিকে কৃষক হিসেবে দেখিয়ে ডিলারের কাছ থেকে এক বস্তা সার জোগাড় করতে পারলেও বাকি সার নিয়ে তিনি চিন্তিত।
উপজেলার থানাহাট বাজারের আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জানান, কুড়িগ্রামে কৃষকদের কাছ থেকে ১২০০-১৩০০ টাকা বস্তা কিনে পরিবহণসহ বিভিন্ন খরচ দিয়ে ১৪০০-১৫০০ টাকা বস্তা বিক্রি করছেন তিনি। সেখানে ডিলারের নিকট থেকে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে সার নিয়ে বাইরে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রণয় বিষাণ দাস জানান, চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৭০ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা দিয়ে শতভাগ সার পাওয়া গেছে। কিছু মানুষ রবিশস্যের জন্য অগ্রিম সার কিনে জমা করায় সাময়িক সংকট সৃষ্টি হলেও আগামী মাসে আর কোনো সারের সংকট থাকবে না।তিনি আরও জানান, কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার বিতরণের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছি।