কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নদীবিধৌত ইউনিয়ন ‘কোদালকাটি’। এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। পুলিশি আইনি সেবা পেতে বন্যায় নৌকা ও খরা মৌসুমে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে আসতে হয় রাজিবপুর থানায়। তাদের ভোগান্তি দূর করতে ইউনিয়নটিতে সপ্তাহে একদিন অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র চালু করেছে রাজিবপুর থানা পুলিশ।
প্রতি শনিবার দিনভর থানার কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন রাজীবপুর থানার ওসি আশিকুর রহমান। ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে বসে এমন আইনি সেবা পেয়ে খুশি এখানকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়,১৯৭৩ সালে স্থাপিত ইউনিয়নটিতে প্রায় ৪৬ হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৩০০। এখানে রয়েছে ২৯টি গ্রাম। ব্রহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা চরে এ গ্রামগুলোর অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষজনের ভোগান্তির সীমা নেই। পুলিশী আইনি সেবা পেতে বন্যায় নৌকা ও খরা মৌসুমে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে আসতে হয় রাজিবপুর থানায়। অনেকে এতো দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে থানায় আসতে চান না। ফলে ছোটখাটো বিষয়গুলোও অনেক সময় বৃহত্তরে রুপ নেয়।
সংঘর্ষ-সংঘাতে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এসব থেকে উত্তরণে ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র চালু করেছে রাজিবপুর থানা পুলিশ। ঘরে বসে বিবাদ মীমাংসা নিরসনে পুলিশের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সহজে আইনি সেবা পাওয়ার জন্য অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্রকে স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম বলেন, ‘আমার ভিটেমাটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১০ বছর আগে। চার বছর হলো চর জেগেছে। সেখানে আমার ছয় শতক জমি দখল করে চাচাতো ভাই। আমি গরিব মানুষ। মামলা-মোকদ্দমা চালানোর সামর্থ্য নেই। অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি।এখানে পুলিশ অস্থায়ীভাবে সেবা দিচ্ছে শুনে বিনা টাকায় একটি অভিযোগ দেই। পরে থানার ওসি বিষয়টি আমলে নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করে দেন। এখন জমি পেয়ে আমি খুবই খুশি।’
স্থানীয় শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে কোদালকাটির মতো এমন প্রত্যন্ত চরে অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র পেয়ে আমরা অনেক খুশি। তবে শুধু কোদালকাটিতে নয়, সারাদেশের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এমন আইনি সেবা কেন্দ্র চালু হলে মানুষজন উপকৃত হবে।
কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষজনের সুবিধার্থে অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র চালু করায় আমরা অনেক খুশি। পুলিশের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক।
রাজিবপুর থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, জেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও দারিদ্র্যপীড়িত এ অঞ্চলের মানুষজন খুবই সহজ-সরল। কোনো দুর্ঘটনা হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ ইউনিয়নের মানুষ থানায় আসতে চায় না। তাই সব কিছু বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সপ্তাহে একদিন এখানে আইনি সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেননা পুলিশ জনতার। তাদের আইনি সেবা দিতে পুলিশ সবসময় প্রস্তুুত।