কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরের শিশুরা যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় বিষয়টি চিন্তা করে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা চরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (৩ জুন) বিকেলে কালির চরে সদর উপজেলার সকল দপ্তরের অফিসারদের উপস্থিতে স্কুলটি উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া চরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ফলের ৫০০টি চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। একইসময়ে স্কুলগামী শিশুদের বেশকিছু গল্পের বই, শিশুদের খেলার জন্য ফুটবল, হ্যান্ডবল, ক্রিকেট সেট ও জাম্পিং দড়ি উপহার দেয়া হয়েছে।
কালির আলগা চরের শিহাব নামের এক শিশু বলেন, আমাদের চরে স্কুল হয়েছে। আমি খুব খুশি। এই স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করব।
কালির আলগা চরে বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো স্কুল নাই। অনেকে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠানো যায় না। যার কারণে মেয়েদের বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখানে স্কুল হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। এখন থেকে চরের শিশুরা এখানে লেখাপড়া করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আজ যেভাবে উপজেলার সকল দপ্তরের অফিসাররা চরে এসে আমাদের চরের মানুষের সমস্যার কথা শুনলেন। এমন অনুষ্ঠান আমার জীবনে দেখি নাই। চরবাসীর পক্ষ থেকে তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুশফিকুল আলম হালিম বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্মার্ট চর এর মাধ্যমে চরের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন করা। এরই ধারাবাহিকতায় এখানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া কালির আলগার চরের মানুষ যেন বন্যায় কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে বাড়ি ভিটে উঁচুকরণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যার সময় এই চরে কেউ মারা গেলে দাফন করা যেত না। মরদেহ নিয়ে যেতে হতো নৌকাযোগে যাত্রাপুরে। এমন মানবিক কষ্ট লাঘবে আমরা এখানে একটি উঁচু স্থানে কবরস্থান করেছি।
অনুষ্ঠানে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নে চরাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। স্কুলটির উদ্বোধন শেষে ফুটবল, মোরগ লড়াই ও দড়ি লাফে খেলার আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কালির আলগা চরটিতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষের বসবাস। এখানে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় গত ২-৩ বছর ধরে এই চরের প্রায় ৪০০-৫০০ শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। যার কারণে একটি বিদ্যালয় নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। বিষয়টি চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজ উদ্বোধন করেন।