কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে পিটিয়ে জখম করলেন ইউপি সদস্য!
এমরান হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান। ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে- চর লরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার প্রবাসী মোসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী ছকিনা বেগমকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে সায় না পেয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে মিজান। তাতেও চাঁদা না পেয়ে ও কুপ্রস্তবে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় চৌকিদার তাজুল ইসলামকে দিয়ে পাশের বাড়ির হাজী আলাউদ্দিনের গরুর খামারের কাজের ছেলে বেল্লালের সাথে মিথ্যা গুজব রটিয়ে ছকিনা বেগমকে রাত নয়টার দিকে নিয়ে বেদম মারধর করে ও বেঁধে রাখে। শারীরিক নির্যাতন করাসহ স্পর্শকাতর স্থানসমূহে অবর্ণনীয় বর্ববর নির্যাতন ও মারধোর করে। পরদিন ভোর বেলায় মামলা-মোকদ্দমা না করার শর্তে মিজান মেম্বার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে বাঁধন খুলে দিলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আহত ও নির্যাতিত ছকিনা বেগমকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ও দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় ওই নারীকে পেটানোর বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী।
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খোলার সাহস করে না। এমনকি নির্যাতিত ওই নারীও অভিযোগ দায়ের করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। মিজানুর রহমান এতটাই কুপ্রভাব বিস্তারী করেন যে- মারধোর খেয়ে, বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েও বিচার প্রত্যাশা করা দূরে থাক ভয়ে মুখ খোলার সাহস করে না কেউ।
অভিযোগের আলোকে মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে ও মোবাইল ফোনে একাধিক কল করেও তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
জেলা গোয়েন্দা সংস্থার ওসি ফজলুল করিম জানান- ওই নারী পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সে বিষয়ে ইউপি সদস্য মিজানকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
অভিযোগ সূত্রে ও নির্যাতিত নারী জানান- শুক্রবার রাত ৯টার দিকে প্রবাসীর স্ত্রী তার বোনের বাড়ি থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন। বাড়ির পাশের আলাউদ্দিনের প্রজেক্ট এর সামনে এলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওঁৎপেতে থাকা লিটন ও কামালসহ কয়েকজন যুবক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ওই নারীর প্রতিরোধ করে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজান ও চৌকিদার তাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেদম প্রহার করেন ও সারারাত বেঁধে রাখেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি শামসুল করিম খোকন উক্ত ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও তীব্র নিন্দা জানান। একই সাথে কেনো নারী নির্যাতনকারী আসামীকে আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হলো না সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
কমলনগর উপজেলা বিএইচআরসির সাধারণ সম্পাদক সার্জেন্ট সোলায়মান চৌধুরী নারী নির্যাতন ও বেঁধে রাখার ঘটনায় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।