কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর বালিয়াপাড়া স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শিক্ষক মহাদেব পালের খপ্পরে প্রায় ৫০টি পরিবার আজ সর্বস্বান্ত। ২০১২ সালে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর ২ বছর ধরে প্রাইভেট পড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে তার মাথায় ধান্দাবাজির ভূত চেপে বসে। প্রাইভেট পড়ানো বাদ দিয়ে শুরু করেন চাকুরী দেয়ার নাম করে অর্থ আদায়। বালিয়াপাড়া গ্রাম থেকে শুরু করে কুষ্টিয়া শহর, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা সহ বিভিন্ন জেলার ব্যক্তিদেরকে চেক দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আজ ঐসকল ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা তার প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব পথে পথে ঘুরছেন বিচারের আশায়।
ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে গোল্ড ব্যবসা করার তথ্যও পাওয়া গেছে। তার বাড়ি কুষ্টিয়া ইবি থানার ধলনগর গ্রামে। উক্ত গ্রামেই তার বাড়ির পাশেই বিবাহ করেন মলিনা নামের একটি মেয়েকে। তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। কুষ্টিয়ার একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে শিক্ষকতা পেশার অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে মহাদেব পাল সোনা পাচারের কাজে লিপ্ত থেকে উপার্জন করেছিল প্রচুর পরিমাণ অর্থ। গত চার-পাঁচ বছর আগে গোল্ডের বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়লেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
তার নিজ গ্রাম ধলনগরের আপন চাচি শাশুড়ির ছেলেকে চাকরি দেয়ার নাম করে জমি বিক্রি অর্থ নেয়, সেই সাথে কেড়ে নেয় ১০ ভরি স্বর্ণের গহনা। এদিকে বালিয়াপাড়া গ্রামের রিপন, সৈন্য, সাব্বাস, নিজাম মন্ডল, মজিবর সহ প্রায় ২০/২৫ জন ব্যক্তির সন্তানদের চাকরি দেয়ার নাম করে চেক দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের এক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে মহাদেব ও তার স্ত্রী মলিনা প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কুষ্টিয়া মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় ৩ কাঠার একটি জায়গা ক্রয় করেছেন বলে উক্ত ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে জানান। পোড়াদহের বিমলের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। চুয়াডাঙ্গা এলাকার আলিম লস্করের কাছ থেকে ১লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় চেক দিয়ে। রাজবাড়ী এলাকার এক ব্যক্তি পাওনা টাকার জন্য চেকের বিপরীতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, উক্ত মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে মহামান্য আদালত।
কুষ্টিয়া শহরের এক মুদি দোকানদার লুৎফরের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা, মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিন্দু ধর্মীয় গরীব নিরীহ ব্যক্তির নিকট থেকে এক লক্ষ টাকা, কুষ্টিয়া শহরের নাম প্রকাশে আর একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ৫ লক্ষ টাকা সহ এ পর্যন্ত প্রায় ৫০জন ব্যক্তির নিকট থেকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এমনকি কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ধরা খেয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পায়। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ছাত্র ভর্তির জন্য এনএস রোডের এক অভিভাবকের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বালিয়াপাড়া স্কুলে বিএসসি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক ক্যান্ডিডেটের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছিল ৮ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া শহরের বজলার মোড় থেকে নিশান মোড়ের দিকে যেতে ডান হাতে এক ডিস ব্যবসায়ীর বাসায় বাসা ভাড়া থাকেন, তবে গত দু’মাস আগে কুষ্টিয়া কোট স্টেশন এলাকায় বাসা ভাড়ায় ছিলেন। তবে তিনি এক বাসায় দীর্ঘদিন বসবাস করেন না দুই তিন মাস পর পর বাসা পরিবর্তন করেন পাওনাদারদের ভয়ে।
মহাদেব পাল বেতন পান ১২ হাজার টাকা, কুষ্টিয়া শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন ১০ হাজার টাকা দিয়ে। এখন সকলের একটাই প্রশ্ন, যিনি উপার্জন করেন ১২০০০ টাকা, কীভাবে তিনি আলিশান বাড়িতে ১০০০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি কিছু পান না বলে তার বাড়ি থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদিকে তিনি প্রাইভেটও পড়ান না, তাহলে তার আয়ের উৎস কি। এখানে হিসাব করলে মিলে যাচ্ছে সবকিছু।
পাওনাদারদের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তারা বলেন, আমরা টাকা চাইতে গেলে মহাদেব পাল আমাদেরকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, এছাড়াও তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নাম ভাঙিয়েও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতো বর্তমানে এখন আমরা তাকে আর খুঁজে পাচ্ছিনা।
গত কয়েকদিন আগে তার বিরুদ্ধে একটি নিউজ প্রকাশিত হলে, প্রতারক মহাদেব প্রতিবেদককে হঠাৎ করেই ফোনে বলেন, আমাকে বাঁচান, আমার ঘরে স্ত্রী সন্তান রয়েছে আমার চাকরি চলে যাবে। না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা লাগবে। তবে তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা ও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অকপটে স্বীকার করে বলেন, এই করোনার মহামারী সময় আমি তাদের টাকা দিতে পারছি না। সময় মত আমি তাদের সমুদয় টাকা বুঝে দিব।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকীর সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, মহাদেব পাল গত বছরের করোনাকালীন সময় থেকে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন না, ফোন দিলেও তিনি তা ধরেন না, অধিকাংশ সময় তার ফোন বন্ধ থাকে, অনলাইনে ক্লাস ও তিনি নেন না। প্রতিমাসের বেতন-ভাতার বিলের স্বাক্ষরের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণিকের যোগসাজশে তিনি স্বাক্ষর করেন তা জানতে পেরেছি। গত দেড় বছরের অধিক করোনাকালীন সময়ে স্কুলে না গিয়ে বেতন বিলে কিভাবে স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করছেন তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল।
তিনি আরো বলেন, তবে গত কয়েকদিন আগে তার বিরুদ্ধে একটি নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর, হঠাৎ করে ম্যানেজিং কমিটির একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আমরা অতি শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিপূর্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাট ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে এ দফায় আমরা তাকে বোধহয় আর রক্ষা করতে পারবোনা তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পাচ্ছি প্রতিদিনই পাওনাদাররা প্রতিষ্ঠানে আসছে টাকার জন্য। ইতিমধ্যে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।