দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত অদম্য সবুজের লেখাপড়া থেমে থাকেনি। বলছিলাম, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামের নতুন চর স্কুলপাড়ার সবজি বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক সর্দারের ছেলে সবুজের কথা। তারা এক বোন ও ছয় ভাই। ভাইবোনের মধ্যে সবুজ পঞ্চম। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় খুব আগ্রহী ছিলেন তিনি। দারিদ্রতার কারণে মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছিলেন সবুজ। চারদিক যেন অন্ধকার হয়ে আসছিল তার। তবে সব অন্ধকার দূর করে আলো হয়ে এবার তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আঞ্জুম জনী।
গত শুক্রবার নারী বাতায়ন ফেসবুক গ্রুপে সাফিনা আঞ্জুম জনী একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘কুষ্টিয়ার কোনো গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থী পাবলিক মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অথচ ভর্তির টাকা বা পড়াশোনা চালিয়ে যাবার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য নেই- এমন কেউ থাকলে বা কারও জানাশোনা থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমাদের একজনের ২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব শেষ হবে ইন শা আল্লাহ্। আর আলহামদুলিল্লাহ্ একজন এ বছর ডা. হয়ে গেল। তাই আমরা নতুন দুজনকে নারী বাতায়ন থেকে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে চাই।’
এরই মাঝে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে সবুজের মেডিকেলে ভর্তির অনিশ্চয়তার বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে। ঢাকা পোস্ট এর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি রাজু একটি লিংক পাঠান সাফিনা আঞ্জুম জনীর কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ তারিখ রবিবার বিকেল ৩টার দিকে সবুজ ও তার বাবার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন জনী। এ সময় সবুজের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সবুজের পড়াশুনার দায়িত্ব নেওয়ায় তার পরিবারে বইছে এখন আনন্দের জোয়ার। নারীদের উন্নয়ন ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে নারী বাতায়ন সংস্থাটি। যেটির উদ্যোগে রয়েছে মৌবন রেস্টুরেন্ট।
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সবুজ আহমেদ বলেন, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে আমি কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু বাবা গরিব হওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নেই। হাটে সবজি বিক্রি করে সংসার চলে। তবে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আঞ্জুম জনী আন্টি। তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমি সবার কাছে দোয়া চাই, যেন লেখাপড়া শেষ করে ভালো ডাক্তার হতে পারি। আর আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য জনী আন্টির প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সবুজের বাবা আব্দুর রাজ্জাক সর্দার বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার ছয়টা ছেলে ও একটা মেয়ে। খুব কষ্ট করে আমার ছেলে সবুজ এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। কখনো খাবার জুটেছে, কখনো জোটেনি। আমি শাক-সবজির ব্যবসা করি। অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও সন্তানের পড়ালেখায় উৎসাহ দিয়েছি। আমি বহু কষ্ট করে তাকে পড়িয়েছি। নদী ভাঙনে আমাদের সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু বাড়ির জমিটা আছে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। কিন্তু তাকে ভর্তি করার মতো টাকা আমাদের নেই। সবুজের ভর্তি ও পড়ালেখা কীভাবে করাব, এসব নিয়ে চিন্তা করে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আজ মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আঞ্জুম জনী নামে মানবিক মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। তিনি সবুজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। বিপদের সময় পাশে থাকার জন্য আমরা খুব খুশি।
মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আঞ্জুম জনী বলেন, মানুষের কাজই হচ্ছে বিপদে মানুষের পাশে থাকা এবং জনসেবামূলক কাজ করা। আমি খবর পেয়েছিলাম, সবুজ মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছে না। খবরটি পাওয়ার পর আমি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব সবুজকে। এটা আমাদের সেবামূলক কাজ। এ ছাড়া সবুজের মতো এমন যারা রয়েছে তাদের পাশেও আমরা দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ।