কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় এমপি হানিফ

কে,এম শাহিন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৪ বার পঠিত

 

 

 

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গত মঙ্গলবার ১৪ তারিখ সকাল ১০ ঘটিকার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত ৮টি ভবনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলন কক্ষ প্রান্ত হতে সংযুক্ত ছিলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুব উল আলম হানিফ, জাতীয় সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া-১ আঃ কাঃ মঃ সরওয়ার জাহান বাদশা, জাতীয় সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া-৪ ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া মোঃ এহেতেশাম রেজা, পুলিশ সুপার, এ এইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ সদ, উদ্দিন খাঁন সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, কুষ্টিয়া জেলা শাখাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শিক্ষার্থী, জেলার বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, জনপ্রতিনিধিগণ, সাংবাদিকবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধন শেষে দুপুরে মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে এক আলোচনা সভা অনষ্ঠিত হয়। আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ উপস্থিত থেকে বলেন, ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও সাংবাদিক আহত করার মতো অপরাধের দায় স্বীকার করে বিএনপি শর্তহীন আলোচনায় বসতে চাইলে সংলাপে বসার কথা বিবেচনা করা যায় কি-না আওয়ামী লীগ ভেবে দেখবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। তিনি বলেন, আগে অপরাধ স্বীকার করতে হবে, দায় স্বীকার করতে হবে। আপনি মানুষ মারবেন, গাড়িতে আগুন দিবেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবেন আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বসে থাকবেন? এখন বিদেশি প্রভু বলল আলোচনায় বসতে আর সরকার আলোচনায় বসে যাবে, এতটা সহজ সমীকরণ?
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, মার্কিন সহকারী উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তিনটা দলের কাছে চিঠি দিয়েছেন। দলের (আওয়ামী লীগের) কাছে চিঠি নিয়ে আমার কাছে এখনো কোনো তথ্য নেই। গত কালকে যারা চিঠি পেয়েছে সেটা তারা বলেছে। আমি যতটুকু শুনেছি, সেই চিঠিতে তারা লিখেছে আগামী জাতীয় নির্বাচন সবাই অবাধ, সুষ্ঠু দেখতে চায় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন একটা আলোচনা, সংলাপ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা তো এই কথা আগেও বলেছিলাম। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক বহু আগে বলেছেন যে, যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শর্তহীন আলোচনায় বসতে আমাদের দুয়ার খোলা আছে। তখন তো ওই বিদেশি শক্তি নিয়ে বিএনপি এমন ভাবল যে তারা বলল, কীসের শর্তহীন, আগে পদত্যাগ করেন তারপরে আলাপ-আলোচনায় বসেন। ২৮ তারিখে একটা ধাক্কা খাওয়ার পরে প্রভুর মাধ্যমে বলছেন সরকার পতন লাগবে না, আমরা এমনিতেই বসতে চাচ্ছি, একটু দয়া করে বসেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারা গাড়িতে আগুন দেয়, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়; এটা সন্ত্রাসী কর্মসূচি।
আলোচনা রাজনৈতিক দলের সাথে হতে পারে। আলোচনা কোনো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে হতে পারে না। আপনারা যদি আলোচনা করতে চান। বিএনপি যদি আলোচনায় বসতে চায়, আমি জানি না আমার দল বা সরকার এই আলোচনায় রাজি হবে কি না। তবে আমি বলতে পারি, আগে ২৮ অক্টোবর পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন, সাংবাদিক আহত করেছিলেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করেছেন, এর জন্য আগে দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান। এরপরে আলোচনায় বসার আহবান জানান তারপর আওয়ামী লীগ বিবেচনা করবে আলোচনায় বসা যায় কি না।

হানিফ বলেন, আগামী ১৬ তারিখ হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবেন। সেই অনুযায়ী নির্বাচন হয়তো আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে রাজনীতির মাঠ সরগরম করার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চক্রান্তও আছে। অনেক দেশের তৎপরতা দেখা যায় যারা নির্বাচন নিয়ে নানান কথা বলছে। তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলে দলের অংশগ্রহণে হোক। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আমাদের সরকার বদ্ধ পরিকর। প্রধানমন্ত্রী এ কথা অনেকবার বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে। আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের শঙ্কা নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজকে চরম দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। গোটা বিশ্বের অর্থনীতিবিদরা বলছেন উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত হওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়ন অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকলে মেডিকেল কলেজ হবে, আমরা আরো উন্নয়ন করতে পারবো, এটা আজকে প্রমাণিত। কুষ্টিয়া থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে আজ আমরা তিন ঘণ্টায় ঢাকা চলে যেতে পারি। রেল সংযোগ ব্যবস্থা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। চট্টগ্রামে নদীর নিচ দিয়ে টানেল হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার কারণে। আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত ছিল এই মেডিকেল কলেজ। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী অঞ্চলের মানুষের কঠিন কোনো রোগ হলে খুবই কষ্ট ছিল। আমাদের এই আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকল ধরনের চিকিৎসা করার সুযোগ হবে। এরপর আর কোনো রোগের জন্য আমার বিশ্বাস এই অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী বা ঢাকাতে যেতে হবে না। আমার ইচ্ছা আছে এই মেডিকেল কলেজকে আরো বর্ধিত করা। আরো বিশেষায়িত ইউনিট করবো। যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষ সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ভিশন থাকতে হয়। নেতৃত্বের যদি ভিশন থাকে তাহলে দেশকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে সেটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। ঢাকায় মেট্রোরেল করেছেন। উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল মানুষ যখন ৩১ মিনিটে যাচ্ছে, তখন মানুষ বলছে এটা আমাদের জন্য আল্লাহ রহমত দিয়েছে। আগে বাসে দুই ঘণ্টা লাগত কষ্ট করে আর এখন এয়ারকন্ডিশন ট্রেনের মধ্যে আধা ঘণ্টায় চলে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের বাকি লেনগুলো যখন চালু হবে তখন গোটা ঢাকা শহরের যোগযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্র বন্দর হয়েছে। এগুলো আমাদের উন্নয়নের মাইলফলক। দেশ উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। সেই কারণে নির্বাচনে জনগণের সমর্থন আমাদের পক্ষে থাকবে, আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবে। সেই কারণে এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। আমরা এজন্য বলেছি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। যে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সক্ষমতা আছে তারা আসবে। যারা জানে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না তারাই নির্বাচন বন্ধ করার জন্য গত দুই তিন বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের অসাংবিধানিক কথা তারা বলে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, যেটা সংবিধানে নাই, যেটাকে উচ্চ আদালত অবৈধ করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে দাবি করে যাচ্ছে। এই দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে ভেবেছিল বোধ হয় বর্হিবিশ্বের সহায়তায়, তাদের প্রভুর বদৌলতে তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে যাচ্ছে। এরকম একটা লাফঝাঁপ শুরু হয়েছিল। ২৮ তারিখে তাদের বেশিমাত্রায় আবেগের কারণে এমন বেপরোয়া হলো পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করল। দেড়শ জনকে আহত করল। এরপর প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নিলেন যে সন্ত্রাসীদের আর ছাড় নয়। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির প্রতি আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম করে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষকে হয়রানি করা, জুলুমবাজি করা এগুলো বরদাশত করা হবে না। এই বাংলাদেশে হত্যা, খুনের রাজনীতি করতে দেয়া হবে না।
উক্ত আলোচনা সভায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সারোয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মারুফ হাসান, জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান খান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর