গভীর রাতের নীরবতা নেমে আসার পর থেকে কিছুক্ষন পর-পর বিরতি দিয়ে ড্রামট্রাক ভর্তি বালু এনে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। এভাবে রাতের আঁধারে গোপনে ভরাট করা হচ্ছে শতবর্ষী পুকুর। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে এভাবেই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া হাইস্কুলের শতবর্ষী পুকুর ভরাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগের তীর স্কুলটির খোদ প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ও একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের জন্য রাতের আঁধারে বালু ফেলে পুকুরের অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট করে ফেলেছেন তারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের আঁধারে বেশকিছু দিন ধরে এই পুকুরে ট্রাক দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। রাতে এক ট্রাক বালু ফেলার পর একটু বিরতি দেওয়া হচ্ছে। পরে আবার বালু ফেলা হচ্ছে। প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে আঁতাত করে পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা করছে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান। যে কারণে রাতের আঁধারে চুপি চুপি ভরাটকাজ চালাচ্ছে তারা। পুকুর ভরাট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বড় পুকুর হলে পরিবেশের ছাড়পত্র নিতাম। এখানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। স্কুলটি তো শহরে এ ক্ষেত্রে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কেনো পরামর্শ নিলেন? এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেকেই অনেক জায়গায় আমাদের নাম বলে। তবে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
কুষ্টিয়া হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডাক্তার এ কে এম মুনির বলেন, পুকুরটি স্কুলের মধ্যেই রয়েছে। খেলার মাঠ করার জন্যই এটি ভরাট করা হচ্ছে। এটি পুকুর নয়, আগের সভাপতি পোনা মাছ চাষ করার জন্য খনন করেছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক জলাশয় বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। যদি বন্ধ করতে হয় অবশ্যই নিয়ম মেনে অনুমতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের শতবর্ষী পুকুর ভরাটের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি। লোকজন পাঠিয়ে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, নানা অনিয়মে জর্জরিত কুষ্টিয়া হাইস্কুল। স্কুলটি নিয়ে আমরা মহাবিপদে রয়েছি। এর মধ্যেই শুনেছি মার্কেট নির্মাণের জন্যই পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এ পুকুরটি প্রয়োজন। তাই পুকুর ভরাট বন্ধ হওয়া উচিত। ভরাট বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই জেলাবাসী এর প্রতিবাদ জানাবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।