কুড়িগ্রামে পরিবেশবান্ধব কাগজের তৈরি কলম বানিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের স্বপ্ন বুনছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী হাসানুর রহমান। এসব কলম বিক্রি করে নিজের পড়ালেখার খরচ মেটানোর পাশাপাশি সংসারের বাড়তি উপার্জনও করছেন তিনি।
হাসানুর রহমান ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের হাসেন আলীর ছেলে। তার বাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ি গ্রামে।
ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসানুর। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, করোনার সময় থেকে ইউটিউব দেখে পরিবশেবান্ধব কাগজ দিয়ে কলম তৈরির প্রশিক্ষণ নেন হাসানুর রহমান। এরপর প্রায় এক বছর ধরে নিজেই কলম তৈরি করছেন।
কাগজ, আঠা এবং শিস বাবদ প্রতিটি পরিবেশবান্ধব কলম তৈরিতে ব্যয় হয় ৩-৫ টাকা। আর এসব কলম বিক্রি করেন ৫-৭ টাকা দরে। প্রতিদিন ১৫০-২০০ কলম তৈরি করতে পারেন হাসানুর। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং, বাজারসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের কাছে এ কলম বিক্রি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন অনায়াসে। সংসারেও বাড়তি জোগান দিচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী হাসানুর।
হাসানুর রহমানের বাবা হাসেন আলী বলেন, ‘চার ভাইবোনের মধ্যে হাসানুর রহমান সবার ছোট। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও কাগজের কলম তৈরি করে আয় করছে। নিজের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর পাশাপাশি আমাকেও সাহায্য করে সে।’
সুমাইয়া খাতুন নামের একজন শিক্ষার্থী বলে, ‘হাসানুর ভাইয়ের কাগজের তৈরি কলম ব্যবহার করছি। এটা অন্যান্য কলমের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। কেননা সাধারণ কলম ব্যবহার করলে হাত ব্যথা করে, আঙুল ঘেমে পিচ্ছিল হয়। তবে কাগজের তৈরি কলম ব্যবহারে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয় না।’
কথা হয় হাসানুর রহমানের সঙ্গে তিনি বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য কাগজের তৈরি কলম তৈরি করি। এছাড়া প্লাস্টিকের শিস ব্যবহার না করে অন্য উপায়ে কলম তৈরির চেষ্টা করছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে কাগজের কলমের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারবো।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। শারীরিক প্রতিবন্ধী হাসানুর রহমানকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি তার ব্যবসা যাতে স্থায়িত্ব পায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।