গাংনীর মেয়রের ঘুষ নেয়া ১৫ লাখ টাকার সূরহা করতে থানায় সালিস
তারেক, মেহেরপুর প্রতিনিধি :
নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুর ইসলামের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সালিস শুরু হয়েছে । শুক্রবার সন্ধ্যায় থানা চত্তরে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এ বিচার কাজ (সালিস) শুরু হয়।
এসময় পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম,গাংনী থানার সেকেন্ড অফিসার আহসান হাবিব,এস আই আব্দুল হান্নান,সাবেক এমপি মো: মকবুল হোসেনের একান্ত সহকারী সাহিদুজ্জামান শিপু,পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান,সাহিদুল ইসলাম,এনামুল হক,শ্রমিক নেতা মনিরুজ্জামান মনি,অভিযোগকারী মৌমিতা খাতুন পলি,তার মা বাবা সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমে মৌমিতা খাতুন পলি তার অভিযোগ উপস্থাপনকালে বলেন, গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগের জন্য পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের সাথে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। জামি-জমা বন্ধক রেখে ও ধারদেনা করে চুক্তি মোতাবেক গত ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখায় মেয়র আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্য সাহানা ইসলাম শান্তনার ৬৪৫৪ নম্বর (হিসাবে) একাউন্টে ৫ লাখ ৭০ হাজার,২৫ জানুয়ারী ৫০ হাজার, ৫ ফেব্রæয়ারী ১ লাখ ৯০ হাজার জমা ও বাকী টাকা নগদ দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৯ মে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আমাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য একজনকে সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগ দেন। টাকা ফেরত চেয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কোন কর্নপাত না করে মারধর ও হুমকি দেয়।
পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৌমিতা খাতুন পলির স্বামী মোমিন স্বাক্ষর করে ৭ লাখ ও বিভিন্ন সময়ে বাকি টাকা মৌমিতা খাতুন পলি নিয়েছে। তারা কোন টাকা পাবেনা।
এসময় উভয় পক্ষের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরে গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমানের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়।
মৌমিতা খাতুন পলির স্বামী টাকা নিয়েছে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান মোমিনের মোবাইল ফোনে জানান তিনি কোন টাকা ফেরত নেননি।
পৌর কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম বলেন, মৌমিতা খাতুন পলি চাকুরীর জন্য ৮ লাখ টাকা দিয়েছে এটা পৌর পরিষদের সকলেই জানে। বাকী ২ লাখ টাকা না দেওয়ার কারনে চাকুরী হয়নি।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন,মেয়র একবার বলছে জমির জন্য টাকা নিয়েছি। আরেকবার বলছে চাকরীর বিষয়ে কোন লেনদেন হয়নি। নিদৃষ্ট করে বলতে হবে কি কারনে টাকা নেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলামের কথায় প্রমান হয় চাকুরীর জন্য টাকা নেয়া হয়েছে।
সালিস বৈঠক চলার শেষ মুহুর্তে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, মৌমিতা খাতুন পলির স্বামী মোমিন যদি স্বাক্ষর করে টাকা নিয়ে থাকে বা স্বাক্ষরে মিল থাকে তাহলে অভিযোগকারী মৌমিতা খাতুন পলিকে টাকা দেয়া হবেনা। আর যদি স্বাক্ষর জাল হয় কিংবা স্বাক্ষর না মেলে তাহলে মেয়র আশরাফুল ইসলাম অভিযোগকারী মৌমিতা খাতুন পলিকে ১৫ লাখ টাকাই দিতে হবে। এই কথার প্রতি সকলেই সমর্থন জানান।
এ কথার প্রেক্ষিতে মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন,আমি তো ৫০ প্রকার স্বাক্ষর করতে পারি। তাই মোমিনের স্বাক্ষর না মিলতেই পারে। সে টাকা নেওয়ার সময় ভুল স্বাক্ষর করতে পারে।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন প্রয়োজনে মোমিনের স্বাক্ষর পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হবে। সবশেষে মোমিন ছুটিতে বাড়িতে আসলে তারপর সালিস বৈঠক আবার বসবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
উল্লেখ্য : বৃহস্পতিবার দুপর ১২ টা থেকে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুর ইসলামের বিরুদ্ধে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শহীদ মিনারে আমরন অনশন শুরু করে শিশিরপাড়া গ্রামের মৌমিতা খাতুন পলি। পরে গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান ও কাউন্সিলর মিজানুর রহমান সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি বসে সুরহা করার আশ্বাস দিলে রাত ১০ টায় অনশন ভেঙ্গে বাড়ি যান।