সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙনও। ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দী লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙনও। ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দী লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
উজান থেকে নেমে আসা তিস্তায় ঢল এবং অতি বর্ষণে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্যায় কারণে এই বিভাগের ৫ জেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। যেসব ফসল নিমজ্জিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে আমন বীজতলা, আউস, শাকসবজি, চীনাবাদাম ও তিল।
ক্ষেতের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার কৃষকরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর কৃষকদের আগাম অন্য ফসল রোপনের পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে বন্যাদুর্গত এলকার জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রংপুর বিভাগে ৭০৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম বন্যায় দুর্গত প্রতিটি এলাকায় অবস্থান করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের ওষুধ সামগ্রী বিনা মুল্যে সরবরাহ করছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় রোপা ৪ হাজার ৫৩১ হেক্টর আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী ও জলাবদ্ধতা হলে এসব ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবে না।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনেয়নের আমন চাষি মিজানুর, আব্দুল হাদিসহ বেশকজন জানান, বন্যায় তাদের আমনের বীজতলা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এবার তারা আমনের আবাদ করতে পারবে না। একই অবস্থা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ অন্যান্য জেলার প্রায় আমন চাষির।
এদিকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান জানান, রংপুর বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখায় বন্যা কবলিত মানুষদের বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে ডায়রিয়া বা অন্যকোন স্বাস্থ্য সমস্যায় অসুস্থ না হয়ে পড়ে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ স্বাস্থ্য টিম গঠন করে দ্রুত বন্যা দুর্গত এলাকায় পাঠিয়েছে। তিনি জানান, এ টিম বন্যাদুর্গত এলাকায় অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা টিম সেখানেই অবস্থান করবে। স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের ডায়রিয়া বা অন্য কোন রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা শোনা যায়নি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, যেসব জমি নিমজ্জিত হয়েছে তার একটি তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হচ্ছে। আশা করি কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে
উত্তরঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসায় শরীয়তপুরের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে জেলার চরাঞ্চলের নিম্মাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা পদ্মার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কিছু কিছু রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কতৃপক্ষ বলছেন বন্যা কবলিতদেও তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তালিকা শেষে ত্রান সহায়তা দেয়া হবে।
সরেজমিন ঘুরে ও জাজিরা ইউনিয়নের মেম্বার আকতার মাদবর জানান, উত্তরঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসায় জেলার প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।ইতোমধ্যে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ,জাজিরা ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল সহ নিম্মাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তা ঘাট ও বাড়ি ঘরে পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। পদ্মানদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পেয়ে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২দিনে পানি বৃদ্ধির ফলে নড়িয়া-জাজিরা রাস্তার মোক্তারচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি এলাকায় প্রায় ৩০০মিটার রাস্তা তলিয়ে গেছে।
ফলে ঐ রাস্তায় গনপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নড়িয়া উপজেলার গাগড়ি জোড়া, পৌর এলাকার ঢালিপাড়া, কলুকাঠি, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর সারেংকান্দি ,পাচুখার কান্দি ,কাজিয়ারচর,পালেরচর,বড়কান্দি, পূর্বনাওডোবা, জাজিরা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে।বিশেষ করে পৌর এলাকার ফকির মাহমুদ আকন কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের পাতালিয়া কান্দি, দুব্বাডাঙ্গা,ভানু মুন্সি কান্দি, হাওলাদার কান্দি, লখাই কাজি কান্দি, জব্বার আলী আকন কান্দি,জব্বার মোল্যা কান্দি ও গফুর মোল্যা কান্দি ঐ এলাকায় প্রায় ১হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা নওয়াপাড়া নশাসন, জপসা ,ভোজেশ্বর সদর উপজেলার পালং, তুলাসার, আংগারিয়া, বিনোদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন নিচু এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। নিচু এলাকার কাচা রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ঐ সব এলাকায় গবাদি পশু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। হাস মুরগী পশু পাখি নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে।ঐ সব এলাকায় পাট, রোপা আমন বোনা আমন, শাক সবজি , ও আখ খেত তলিয়ে গেছে। ফলে ঐ সব এলাকার শত শত একর জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোরবানির জন্য পালিত গবাদি পশু নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকেরা মারাতœক বিপদে পড়েছে। বন্যার পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পেলে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির স¤œূখীন হবে। এ সংবাদ লেখা বন্যা কবলিত এলাকায় এলাকায় কোন ত্রান সামগ্রী বরাদ্দ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জয়নাল মাদবর বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের বাড়ি ঘর তলিয়ে গিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলে ও সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলায়ই নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জাজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে জাজিরার ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশু হাস মুরগী নিয়ে কষ্টে আছে মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা তালিকা করতে শুরু করেছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় বলেন, বন্যার পানিতে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ,মোক্তারচর ও পৌর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যা কবলিত দেও জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। এখনো কোন লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্থদেও তালিকা প্রনয়ন করা শুরু হয়েছে। তালিকা করা হলে ত্রান সহায়তা দেয়া হবে।