কারিমা আক্তার কানিজ (১৪)। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কলকুটিপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের মেয়ে এবং এবারের জেএসসি পরীক্ষায় কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় সে।
গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে কানিজ। তবে তার আত্মহত্যার পেছনে লুকিয়ে আছে এক বর্বরোচিত অত্যাচারের ঘটনা। যে অত্যাচারের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ধুকে ধুকে বেঁচে আছে অনেক কানিজ, আর যারা সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে তারা জীবনকে শেষ করার মাধ্যমে এই অত্যাচার থেকে মুক্তি খুঁজে নিচ্ছে।
ভাবছেন কি সেই বর্বরোচিত অত্যাচার? সেটার নাম বখাটে। এই বখাটেদের উৎপাত সহ্য করতে না পেরে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে প্রতিদিনই কোন না কোন কানিজ নিজেকে বলিদান করছে। অথচ কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটা মূল্যবাণ জীবন যাদের কারণে অকালে ঝরে গেল সেসব বখাটেদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসন চরম উদাসীনতার পরিচয় দেয় বলেও খবর দেখা যায়।
যে বখাটের উত্ত্যক্ত সইতে না পেরে কানিজ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সেই বখাটেদের নাম কাওছার আলী (১৮) ও বেনজির আলী (২৬)। বখাটে কাওছার একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে এবং শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। বেনজির আলী বখাটে কাওছারের মামাতো ভাই। ঘটনার পর থেকে বখাটে কাওছার পলাতক রয়েছে।
মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কারীমা আক্তার কানিজ কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য শেষ হওয়া জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের যাওয়া আসার পথে একই গ্রামের আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে কাওছার (১৮) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত এবং নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতো। ঘটনাটি কারীমা তার বাবা-মাকে জানায়। তারা ছেলের বাবা-মা কে জানালে ছেলের পরিবারের লোকজন ছেলেকে শাসন না করে উল্টো মেয়ের পরিবারের লোকজনকে অপদস্ত করে।
ঘটনার দিন সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে কারীমা নিজ বাড়ির দরজায় দাড়ালে কাওছার এসে তাকে ‘বউ বউ’ বলে ডাকতে থাকে, এবং বেনজীরসহ আরো কয়েকজন দাড়িয়ে থেকে হাততালি দেয় ও হাসাহাসিতে মেতে ওঠে। এ সময় কারীমা সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে ছুটে গিয়ে নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে ঘরের তীরের সঙ্গে তাকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় পায়। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কানিজের বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, আমার বুকের মানিককে কেড়ে নেয়ার জন্যই তারা পরিকল্পনা করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে নাই, তাকে নিজের জীবন শেষ করতে বাধ্য করা হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়ে বাসার বাইরে বেরোলেই কাওছার ও বেনজীররা আমার মেয়েকে দেখে চিৎকার করে বলতো, এই যে কাওছারের বউ যাচ্ছে। তারা উচ্চস্বরে ভাবী, ভাবী বলে ডাকতো।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে কখনও মিথ্য বলতো না, আমি আমার সন্তানদের সেটাই শিখিয়েছি। এই মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে আমার মেয়ে আজ ওদের কারণে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই, আমি চাই আমার মেয়ের মত আর কোন মেয়ে যেন বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে নিজ জীবন শেষ না করে।
এদিকে কাওসারের বাড়িতে গেলে তার মা দাবী করেন, তার ছেলে কি করেছে তার কিছুই জানেন না তিনি।
কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মফিজুল হক জানান, মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে মেয়েটির অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোন মামলা হয়নি। যদি তারা কোন অভিযোগ করেন তবে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।