কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অপকর্মের মূল হোতা, একাধিক মামলার আসামী ও আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য বাপ্পি সর্দার (৩০) নামের একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষন চেষ্টা ও যৌন নিপীরনের মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী নারী। সোমবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বাদী হয়ে বাপ্পির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারী। অভিযুক্ত বাপ্পি সর্দার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের স্বস্তিপুর গ্রামের দবির সর্দারের ছেলে। সম্প্রতি গত শনিবার (১২ আগস্ট) একটি গরু চুরি মামলায় আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই মঞ্জুরুল ইসলামের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন বাপ্পি।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু থানা এলাকায়। তিনি কুষ্টিয়া বটতৈলে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। কুষ্টিয়া ইবি থানাধীন বৃত্তিপাড়া কটলার মোড় এলাকায় তার দুলাভাইয়ের খাবার হোটেলে রান্না করার কাজ করেন ওই নারী। বাপ্পি মাঝে মধ্যেই সেই হোটেলে খাবার খাওয়ার জন্য যেতো এবং সুযোগ পেলেই ওই নারীকে অশ্লীল কথাবার্তা সহ কু-প্রস্তাব দিতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ইং ১১/০৮/২০২৩ ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৭ টার সময় হোটেলের কাজকর্ম শেষ করে বটতেল ভাড়া বাসায় ফেরার পথিমধ্যে ওৎ পেতে থাকা বাপ্পি গোপনে তার পিছু নেয়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৭ টার সময় কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন বটতৈল চারমাইল আনসার ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত ওই নারীর ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে পিছন থেকে ওই নারীর মুখ চেপে ধরে। তারপর ওই নারীকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যৌনপীরন শুরু করে ধর্ষনের চেষ্টা করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে রক্তজমাট জখম করে। সেই সময় তার সাথে জীবন, আকাশ ও রাসেল নামের বিভিন্ন অপকর্মের মূল হোতারাও ছিল বলে গোয়েন্দা সুত্র জানায়। ইতিমধ্যে এই তিন জন বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারীতে আছে।
তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে বাপ্পি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে ওই ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৩৩, জি আর নং -৪২৭, তারিখ: ১৪/০৮/২০২৩ ইং, ধারা: ৯(৪)(খ)/১০ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০২০);। জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা সহ যৌন নিপীড়ন করার অপরাধ।
স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত বাপ্পির বিরুদ্ধে এলাকায় ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সে সকল অপরাধের সাথে জড়িত। এমনকি একজন সরকারী কর্মকর্তাকেও ব্লাক মেইল করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়। তার অত্যাচারে পরবর্তীতে তিনি এই জেলা থেকে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যায়। তার এই কাজের সাথে জড়িত ছিল জীবন, আকাশ ও রাসেল নামের এই তিনজন। অনেকেই আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য হিসেবেও তাকে বর্তমানে আখ্যায়িত করছেন। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা সহ, গরু চুরি ও বেশ কয়েকটি হত্যা চেষ্টার মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে। যার মামলা নম্বর গুলো:- কুষ্টিয়া সদর থানার মামলা নং- ৬/২১২, তারিখ-০৩/০৫/২০২১, জি আর নং-২১২/২০২১, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪২৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দঃবিধি। (খুনের উদ্দেশ্য মারাত্মক জখমের অপরাধ)। কুষ্টিয়া সদর থানার মামলা নং- ৩৩/ তারিখ: ২৫/০৯/২০২১, জি আর নং-৪৩৮/২০২১ ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/৫০৬/১৪৮/৩৪ দঃবিধি। (হত্যার অপরাধ)। কুষ্টিয়া সদর থানার মামলা নং-১৬ তারিখ- ১০/০৭/২০২৩ জি আর নং- ৩৫৫ ধারা: ১৪৩/৩৪১/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬(২)/১১৪ দঃবিধি। (খুনের উদ্দেশ্য মারাত্মক জখমের অপরাধ)। কুষ্টিয়া সদর থানার মামলা নং- ২৯ তারিখ- ১২/০৮/২০২৩, জি আর নম্বর-৪২৩, ধারা- ৪৫৭/৩৮০/৫১১ দঃবিধি। (গরু চুরির অপরাধ)।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একজন নারী বাদী হয়ে বাপ্পির নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ইতিপুর্বে বাপ্পি অপর একটি চুরি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলাও আছে।