পলিথিন ও প্লাস্টিক স্বাভাবিকভাবে পচে না। এতে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক কোনো কাজে না লাগলেও এসব গলিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করছেন পারভেজ মোশারফ নামের এক তরুণ। পারভেজের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের মইদাম গ্রামে। তিনি ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মইদাম বাজারে তাঁর একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে।
জানা গেছে, আড়াই বছর আগে ইউটিউবে পলিথিন দিয়ে তেল তৈরি করা দেখে পারভেজ তেল তৈরি করতে উৎসাহী হন। এ কাজের জন্য স্টিলের তৈরি একটি খালি তেলের ড্রাম, একটি মাঝারি আকারের প্লাস্টিকের ড্রাম, স্টিল ও প্লাস্টিকের কয়েক ফুট সরু পাইপ এবং চারটি প্লাস্টিকের বোতল প্রয়োজন হয়। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী স্টিলের ড্রামে ভরে নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ দেওয়া হলে এগুলো গলে গ্যাসে পরিণত হয়। সেই গ্যাস ড্রামের সঙ্গে যুক্ত স্টিল ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি পাইপলাইনের সাহায্যে পানিভর্তি অন্য একটি ড্রামের মধ্য দিয়ে বের হয়ে পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত চারটি বোতলে চলে যায়।
প্রথম বোতলে জমা হয় ডিজেল, দ্বিতীয় বোতলে পেট্রল এবং তৃতীয় বোতলে অকটেন। শেষের বোতলে রাখা পানিতে পাইপলাইন দিয়ে আসা গ্যাস ঠান্ডা হয়ে জ্বালানি গ্যাসে পরিণত হয় এবং পাইপলাইনের শেষ প্রান্তে থাকা স্টিলের পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসে। পারভেজ বলেন, ‘১০ কেজি পলিথিনবর্জ্য থেকে ৪ লিটার ডিজেল, ২ লিটার পেট্রল, ১ লিটার অকটেন পাওয়া যাবে।
পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক আবর্জনার পরিবর্তে সম্পদে পরিণত করা যাবে।’ স্থানীয় বাসিন্দা ও মুদিদোকানি মমিন বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক দিয়ে তেল তৈরি করা সম্ভব, তা প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে পারভেজের তৈরি করা তেল দোকানে রেখে বিক্রি করেছি।’
মইদাম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘পারভেজ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন দিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করছে। এতে একদিকে পরিবেশ ভালো থাকছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেল উৎপাদিত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদন করা গেলে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি তেল পাওয়া সম্ভব হবে।’