সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত মেহেরপুর। জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রতিটা গ্রামের মা-বোনেরা বাড়ির আঙ্গিনা, ভিটা ও পুকুরের পাড়ে মানকচুর চাষ করে থাকেন। অতীতে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা মা-বোনদের কাছ থেকে ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে মানকচু কিনে তা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় উচ্চমূল্যে বিক্রি করে থাকে।
বানিজ্যিক ভাবে জেলায় মানকচুর চাষ না হলেও মালেশিয়া প্রবাসী জেলার গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে আশরাফুজ্জামান দেশে ফিরে শুরু করেছেন মানকচুর চাষ।
তিনি প্রায় ৪০ শতক জমিতে মানকচু চাষ করেছেন এবং লাভের মুখ দেখার আশায় বুক বেঁধেছেন।
তিনি জানান, আমার বাবা বাড়ির আঙ্গিনায় মানকচু রোপণ করতেন এবং মানকচু বিক্রি করে আশানুরূপ ফলন ও লাভবান হতেন। কোন রকম সার, কীটনাশক ব্যবহার না করেই অধিক লাভ হতো। একারণেই আমি উদ্যোগ নিয়েছি যাতে করে মালেশিয়া না থেকে দেশে থেকেও মানকচু চাষ করে সাবলম্বী হতে পারি।
তিনি বলেন, গত ভাদ্র মাসে প্রায় ৪০ শতক জমিতে মানকচুর চারা রোপণ করি যা এখন প্রতিটা গাছে ৩/৪ কেজি করে ওজন হয়েছে। বিক্রির সময় এর ওজন প্রায় ৪/৫ কেজি করে হতে পারে। প্রতি ২ হাত দূরত্বে ১ টি করে মানগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপণের পর ৪০ শতক জমিতে ২০ কেজি পটাশ, ৪০ কেজি টিএসপি ও কিছু ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে মানকচু চাষে খরচ হয় প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মানকচু ৩০/৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে প্রতি বিঘা জমিতে সকল খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব। এবছরে ভালো ফলন ও আশানুরূপ মূল্য পেলে আগামীতে মানকচুর চাষ বৃদ্ধি করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলেও জানান আশরাফুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, দেশে যাদের জমিজমা রয়েছে অথচ বেকারত্ব সমস্যায় রয়েছেন তারা মানকচুর চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যেতে পারে।
গাংনী উপজেলা শহরের রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম জানান, দেশে বিভিন্ন ধরনের কচু পাওয়া গেলেও মানকচুর মাণ বেশি। মানকচু সহজে হজম হয়, পিত্ত ও রক্তের দোষ বিনষ্ট করে, শরীরও ঠান্ডা রাখে। এছাড়াও অনেক রোগের জন্য মানকচু খুবই কার্যকরী। তবে কুষ্ঠ, দাদ, আমাশয়, রক্তপিত্ত্ব অসুখে কচু না খাওয়াই উত্তম।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাসেল রানা জানান, মানকচু লাভজনক আবাদ। মানকচু চাষে তেমন একটা পুঁজি খাটাতে হয়না। তাছাড়া রোপণের পর অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশকের প্রয়োজন পড়েনা। চারা রোপণ করে রাখলেই কোনরকম বাড়তি খরচ ছাড়া এ ফসল বেড়ে ওঠে। রোগবালাই অত্যন্ত কম থাকায় অন্যান্য সবজির ছাড়া মানকচুতে অধিক হারে ফলন ও লাভ পাওয়া সম্ভব। কেউ মানকচু চাষে আগ্রহী হলে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুজ্জামান খান বলেন, মেহেরপুরের মাটি সকল ধরনের সবজি চাষের জন্য উপযোগী। জেলার অধিকাংশ বাড়ির, পান বরজের ও সবজি ক্ষেতের পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে মানকচুর চাষ দেখা গেছে।
মেহেরপুর জেলায় এই মানকচু চাষে যদি চাষীদের উৎসাহিত করা যায় তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক বড়ো ভূমিকা পালন করবে।