মেহেরপুরে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এ বছর আমন ধানের বীজ বপনের পর থেকেই হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় অধিক ফলন হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৭‘শ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় ১৩ হাজার ৬’শ ১০ হেক্টর এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে দেওয়া হয়েছে কৃষি প্রণোদনা সহায়তা।
সাধারণতঃ ধান গাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর ঘাস ফড়িং ও পাতা ফড়িং আক্রমণ করে। পোকা খাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে এর মাধ্যমে অতি সহজেই ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ হয় ফসল। তাছাড়া ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন হলে পাচিংয়ের সাথে পলিথিন এবং কলার ডাটা ধানের সারিতে রাখলে ভয়ে ইঁদুর পালিয়ে যায়।
কৃষকরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ আমনের ফলন ভালো ফলনের জন্য পরামর্শ নিয়েছেন।
মাইলমারী গ্রামের কৃষক মাসুম পারভেজ জানান, এ বছর আমার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। আমাদের ব্লকের কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেতে একাধিক বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুতে দিয়েছেন, ফলে ক্ষতিকারক পোকা কম হয়েছে। ফলে ফলন খুব ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
করমদী গ্রামের বজলুর রহমান জানান, এ বছর আমন ধান চাষ এবং অনুকুল আবহাওয়া থাকায় হয়তো ভালো ফলন পাবো।
লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, বিগত বছরগুলোতে অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধানের অধিকাংশই রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এবারে মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধলার মাঠে সবুজে ভরে রয়েছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে কাঁচা ধানের সবুজ শ্যামল শীষ। ধান কর্তনের পূর্ব মূহুর্তে ঝড়বৃষ্টি না হলে আশানুরূপ ফলন হবে ইনশাআল্লাহ।
সোনাপুর গ্রামের শাহাবুদ্দীন জানান, এ বছরে এখন পর্যন্ত ধানের ক্ষেতে কোনো রোগ বালাই দেখা যায়নি। ফসল ঘরে তোলার বাকী সময় প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এ বছর সম্ভাবনাময় আশানুরূপ ফলন হবে।
হরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, এবছরে ধানে পোকার আক্রমণ তেমন একটা নেই। ধানের বাজারদর ভালো থাকায় কৃষকও খুশি। তবে সার, বীজ, সেচ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাদ করতে কিছুটা আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে কৃষকদের।
হিন্দা গ্রামের আক্কাস আলী জানান, শেষ মুহুর্তে ভালো ফলনের জন্য পোকামাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করতে দেখভাল করতে হচ্ছে। তবে কেউ কেউ ধানের পোকা-মাকড় প্রতিরোধ করতে কীটনাশকও স্প্রে করছেন।
সাহারবাটী বাজারের আড়ৎদার আনিসুর রহমান জানান, গত মৌসুমে আমন ধানের ভাল দাম পাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ফের আমনেই স্বপ্ন বুনেছেন অনেক কৃষক।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটা ক্ষেতের আমন ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। আর সেই সাথে দুলছে আমন চাষীদের স্বপ্ন। কৃষকরা আশাবাদী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমন ধানে তারা আশানুরূপ ফলন ও ন্যায্য মূল্য পাবেন।