নাগলিঙ্গম সুন্দর, সুগন্ধি ও ঔষধি বৃক্ষ। নাগলিঙ্গম কে বলা হয় ফুলের রানী। নাগলিঙ্গম এর বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita Guianensis. এর ফল অনেকটা বেলের মত। তবে এটি Cannonball Tree নামেও পরিচিত কারণ এর ফল অবিকল দেখতে কামানের গোলার মতো। নাগলিঙ্গম এর ফুল ফোটে গাছের গুড়ি থেকে। গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হয় ছড়া। আর এই ছড়া থেকেই ফুটে অনিন্দ্য সুন্দর নাগলিঙ্গম ফুল। পাপড়ি, রেনু, ফুলের গঠন নাগলিঙ্গম কে দিয়েছে অভূতপূর্ব স্বকীয়তা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগলিঙ্গম বৃক্ষ থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সন্ধান মেলে দু’টি নাগলিঙ্গম বৃক্ষের। এর একটি মেহেরপুর জেলা শহরের কলেজ মোড়ে তাহের ক্লিনিকের সামনে। অপর একটি রয়েছে গাংনী উপজেলা শহরের হাসপাতাল বাজারে পোস্ট অফিসের সামনে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বিপরীতে জগলুল পাশা’র বাসভবনের সামনে। বিরল প্রজাতির বৃক্ষের ফুলটির সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। বৃক্ষের পাশ দিয়ে গেলে ফুলের তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা কাছে টানবেই মানুষকে। এ ফুলটির পরাগ চক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফনার মতো। একারণেই হয়তো এর নাম নাগলিঙ্গম হয়েছে। গোলাপি এ ফুলের পাশেই চোখে মেলে অসংখ্য ফল।
এ ফল নাকি হাতির প্রিয় খাবার। একারণেই কোথাও কোথাও এ ফলটি হাতির ফল নামেও পরিচিত। গাংনী টেকনিক্যাল কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, নাগলিঙ্গম একটি বিরল প্রজাতির গাছ। বাংলাদেশে এটি কমসংখ্যক রয়েছে। তবে গাংনী উপজেলা শহরে অবস্থিত গাছটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে দেখছি। তিনি জানান, প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে গাছটি রোপন করেন এডভোকেট গোলাম মোস্তফা। গাছটির ফুল মানুষকে আকৃষ্ট করে। তবে বড় বড় ফল না হলেও অসংখ্য বটের ফলের মতো ফল হয়ে ঝরে যায়। ফুলের ঘ্রাণের টানে অনেকেই ছুটে আসে গাছের কাছে।
মেহেরপুর শহরের তাহের ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকার ডাঃ আবু তাহের জানান, প্রায় ২০ বছর পূর্বে চুয়াডাঙ্গার একজন গাছ প্রেমিক মেহেরপুর সদর হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট রজব আলী নাগলিঙ্গম গাছটি রোপন করেছিলেন। সেসময় তিনি অসংখ্য গাছ রোপণ করেন। বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির গাছটি প্রায় ১৫-১৬ টি রয়েছে। তিনি জানান, গাছটিতে বছরে ৩ বার পাতা পরিবর্তন হয়। পাতা ঝরে পড়ার ৫-৬ দিনের মধ্যে আবারও নতুন পাতা গজায়। ফুলের ঘ্রাণ পাগল করা এবং এর ফল হয় কতবেলের মতো। গাছের কান্ড থেকে ফুল আসার সময় সেগুলো সাপের ফনার মতো থাকে বলে এটাকে নাগলিঙ্গম বলা হয় বলেও তিনি জানান। মেহেরপুরসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, নাটোর, গাজীপুর, রাজবাড়ী ও বরিশালে নাগলিঙ্গম বৃক্ষ রয়েছে বলে জানা যায়। বৃক্ষটি সাধারণত ৩০-৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে।
গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারনভাবে ৮-৩১ সেঃমিঃ, কিন্তু ৫৭ সেঃমিঃ পর্যন্ত লম্বায় পৌঁছতে পারে। বৃক্ষটি মুলতঃ নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম এ প্রজাতীর হয়ে থাকে। নাগলিঙ্গম বৃক্ষের পাতা দিয়ে প্রলেপ দিলে বাত ব্যথা উপশম হয়। গাছের বাকল সিদ্ধ করে খেলে অর্শ্ব ভালো হয়। এছাড়াও ম্যালেরিয়া নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস পানে উপকার পাওয়া যায় বলে জানান, মেহেরপুর শহরের ইনসান কবিরাজ। গাংনী বনবিভাগের কর্মকর্তা হামীম হায়দার দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল কে জানান, নাগলিঙ্গমসহ বিরল প্রজাতির যেসব বৃক্ষ রয়েছে সেগুলো আমরা কর্তন করিনা এবং যথাসম্ভব রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করা হয়।
যেহেতু বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে বনবিভাগের নিজস্ব জমি নেই। সে হিসাবে কোন প্রকল্প হাতে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়না। তবে বিরল প্রজাতির গাছ কর্তনরোধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশে কতটা নাগলিঙ্গন বৃক্ষ রয়েছে এমন তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে, দেশব্যাপী তেমন পরিসংখ্যান না থাকলেও গাংনীতে ১ টি এবং চিটাগাং এলাকায় দেখেছেন বলে জানান।