নগরীর বহদ্দারহাটস্থ এলাকার ত্রাসক্ষেত, এস এস আবাসিক হোটেলের দেহ ব্যবসায়ী, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন থানায় ৬ টি মামলার আসামী চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রুট সোহলের শোক দিবসের মঞ্চে প্রধান অতিথির সাথে উঠাকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ২০ আগস্ট (শনিবার) জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
এসময় চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রুট সোহেলকে দেখা যায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যের পুরো সময় মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের সাথে হেসে কথা বলতে। এনিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য সৃষ্টি হয়েছে উপস্থিতিদের ঘিরে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফ্রুট সোহেলের নানান অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরও টাকা জোড়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে এই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এদিকে একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানে নেতাদের সাথে কোনমতে ছবি তুলে কখনো সে নিজেকে পরিচয় দেন সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পিএস বলে, কখনো পরিচয় দেন প্রয়াত ৮ নং আসনের এমপি জাসদ নেতা মঈনউদ্দীন খান বাদলের সমর্থক বলে, আবারও সে পরিচয়দেয় চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক কর্মীদের নেতা হিসেবে,অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী মনোনীত হওয়ার পর রাতারাতি সে বনে যায় মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থক, এছাড়াও তিনি হর হামেশাই প্রকাশ্য নিজেকে চান্দগাঁও ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরালের রাজনৈতিক সহযোগী সহ বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচয় দেন। তবে উপরোক্ত কেউই তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন না এমনটাই মন্তব্য সকলের।
রাজনৈতিক সহযোগী ও বিশ্বস্ত দাবী করার বিষয়ে এর আগে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাল সরাসরি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ফ্রুট সোহেল আমার পরিচিত বা কর্মী নয়। আমার মিছিল মিটিংয়ে এসে আমার সাথে ছবি তুলে কেউ যদি অপকর্মে লিপ্ত হয় তার দায় ভার আমার না। এদিকে কাউন্সিলর তার বক্তব্যে ফ্রুট সোহেল তার কেউ নয় বলারপরও তার সাথে একই মঞ্চে দেখা যাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাযাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। স্মরণ সভাটির আয়োজক ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাল এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, স্মরন সভাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল সে হিসেবে ফ্রুট সোহেল আসতে পারে কিন্তু মঞ্চে উঠতে পারে না। আমার নজরে আশার সাথে সাথে আমি ওকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেই।
তিনি আরো বলেন, বহদ্দারহাট মোড়ে যে চাঁদা উত্তোলন করে তার বিষয়ে আমি অবগত নই। কিছু দিন আগে সিটি কর্পোরেশন এর একটি অভিযানে ফুটপাতের দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। ১৬০০ টাকা থেকে শুরু করে আজ লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক এই ফ্রুট সোহেল তবে প্রশ্নটা হচ্ছে কিভাবে গড়ল এই টাকার পাহাড়। খোজ নিয়ে জানাযায় বর্তমানে তার মাসিক ইনকাম প্রায় লক্ষ টাকা কিন্তু এই আয়ের পিছনে নেই কোন উল্লেখযোগ্য আয়ের উৎস। বহদ্দারহাট এলাকায় থাকা তার একটি বিরিয়ানির হোটেল ছাড়া নেই তার কোন আয়ের উৎস। তবে কিভাবে সে হলো এই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক ? মানবপাচার, হত্যা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি সহ তার নামে নগরীর চান্দগাঁও থানায় রয়েছে পাঁচ টি মামলা ও পাঁচলাইশ থানায় রয়েছে একটি মামলা। তবুও সে নিজেকে বলে বেড়ায় নির্দোশ। তথ্যমতে, সন্ত্রাসী ফ্রুট সোহেলের পরিচালিত “বহদ্দারহাট একতা ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি” নামক একটি সমিতির নামে চালায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী। বহদ্দারহাট এলাকায় ফল ব্যবসা করতে হতে হয় এই সমিতির সদস্য। নাহলে এলাকায় ফল ব্যবসা করা যায় না ফ্রুট সোহেলের সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে।
এছাড়াও যারা ফুটপাত ও ভেনগাড়িতে ফলের ব্যবসা করে তাদের থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে দৈনিক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এর বিরুদ্ধে। তবে, প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। বর্তমানে ফ্রুট সোহেলর সরাসরি নেতৃত্বে তার এলাকা বহদ্দারহাট বারাইপাড়া এলাকায় জমজমাট জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করছে তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। সেখানে টাকা দিলেই পাওয়া যায় ইয়াবা, গাঁজা সহ দেশীয় মদ।
ফ্রুট সোহেলের বিষয়ে কেউ বিরোধিতা করলেই তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করা হয়। এরফলে ফ্রুট সোহেলের বিষয়ে এক প্রকার মুখে কুলুপ এঁটেছেন এলাকার সচেতন নাগরিকরাও। তার সকল অপকর্মের সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম হলো- তার ভাই রুবেল, সাব্বির হোসেন সাকিব অরফে পাইপ পিটার সাকিব, ধামা জুয়েল, নেওয়াজ শরীফ ওরফে কিরিচ নেওয়াজ ও পূর্ব ষোলশহর এলাকার তার ঘনিষ্ঠ সহচর জসিম উদ্দিন,ইমতিয়াজ, নাছির সহ অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত আসামীরা। তার হয়ে কাজ করে তার পালিত কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী মোঃ কায়সার, আজাদ, মোঃ রায়হান, সাকিব, ওবাইদুল ইসলাম আবিদ, হাসান, সোহান, আব্দুল আল মামুন, মেহেদী হাসান, আরিয়ান ইসলাম শাকিল, সাহিদুর ইসলাম হৃদয়, মহিন, শেখ সারফারাজ, নওশাদ, জিসান, আব্দুল আল মামুন, হামিদ সহ অসংখ্য পথভ্রষ্ট কিশোর সন্ত্রাসীরা। যারা প্রতিনিয়ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বহদ্দারহাট ও আশপাশের এলাকা।