একটু ভালো থাকার জন্য,একটু ভালো রাখার জন্যই বেছে নেওয়া প্রবাস জীবন। দেশে দালালদের হাতে কয়েক দফা প্রতারিত হতে হয় প্রবাসীদের। কোনও না কোনো ভাবেই প্রতারিত হয়নি এরকম খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রবাসীদের জীবন,প্রতারণা একটি অভিশাপের নাম। এমনি এক ঘটনার খবর পাওয়া গেলো উপজেলার বৈঠাপাড়া এলাকার মৃত্যু কাজী সঞ্জের আলীর ছেলে জোমাত আলী’র। হরিণাকুণ্ডু বাজার (বটতলাতে) ছোট্ট একটি পতাকার দোকানে সেলাইমেশিংয়ে দর্জি’র কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে তাদের সংসার মুটামুটি ভালোই চলছিলো। এ সময় পরিচয় হয় মানিক নামে একজনের সঙ্গে। পরিচয়সূত্রে জোমাতকে বিদেশে যাওয়ার জন্য উৎসাহী করেন মানিক। অনেক টাকা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠাতে ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা খরচের কথা জানান মানিক। তবে দেশে থেকেই সেই টাকা সম্পূর্ণ দিতে হবে। মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে এভাবেই জোমাত আলী-কে ফাঁদে ফেলেন বৈঠাপাড়া গ্রামের হাইদার আলী’র ছেলে মানিক। জোমাত আলী অনেক কষ্টে ধার দিনা এবং এনজিও থেকে কিস্তি তুলে ওমানে যান ঠিকই, তবে সেখানে যাওয়ার পর সে জানতে পারে তাকে বাকী টাকায় বিদেশে এনেছেন নোমান। চুক্তি মতে কাজ করে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এখানেই শেষ নয় জোমাত বিদেশে যাওয়ার পর মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সাথে নানা অজুহাতে ফুসলানোর কাজ চালাতে থাকে মানিক। এমনকি জোমাতের স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এক পর্যায়ে মানিক তাকে বিনা টাকায় বিদেশে তার কাছে নিয়ে আসারও কু-প্রস্তাব দেয় বলে সাংবাদিকদের জানান ঐ গৃহবধু। যখন ঐ গৃহবধু তার কথায় রাজী না হয় তখন, বিদেশে জোমাতকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে বলে নানা ধরণের কথা বার্তা বলেন বলে জানান ভূক্তভুগী।
একদিকে ঋণের বোঝা অপরদিকে স্বামীর কথা ভেবে নিরুপায় হয়ে, মাসের বেতনের কথা বল্ললে ঐ নারীকে নোমান জানান, জোমাত ৬ মাস কোনও টাকা পঁয়সা বেতন পাবে না। তখন দিশেহারা হয়ে স্বামী জোমাতের সাথে যোগাযোগ করে, কোম্পানির মালিকের সাথে কথা বলে বেতনের কিছু টাকা দিতে অনুরোধ করে এবং সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে জোমাত আলী।
৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে বলে ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে আমাকে বিদেশে পাঠান মানিক। সেজন্য আমার নিকট থেকে ১ম পর্যায়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার, ২য় পর্যায়ে ১ লক্ষ, ৩য় পর্যায়ে ১ লক্ষ এবং ৪র্থ পর্যায়ে ২৩ হাজার টাকা নেয় মানিক। আমার সাথে সম্পূর্ণ প্রতারণা করেছে আমি এর সঠিক বিচার চাই বলে জানান জোমাত আলী।
এবিষয়ে হরিণাকুণ্ডু (বাবুপাড়া) গ্রামের মৃত্যু ছবের আলী মণ্ডলের ছেলে মোঃ বদর উদ্দীন বাবু জানান, কুদ্দুস আর আমি নিজেই উপস্থিত থেকে ২ লক্ষ টাকা মানিক-কে দিয়েছি। অপর দিকে বৈঠাপাড়া গ্রামের মৃত্যু ইসমাইল শেখ এর সহধর্মিণী রহিমা খাতুন জানান, জোমাত ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা গুনে দিয়েছিলো আমি নিজের চোখে দেখেছি। তাছাড়া মানিকের ছেলে ইকবাল নিজের মুখে স্বীকার করেন জোমাত আমার সাথে করে ২৩ হাজার টাকা দেন।
এদিকে হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,আমি ঘটনাটি শুনেছি। ভূক্তভুগী জোমাত আলী আমার কাছে ঘটনাটি বলার পরে আমি মানিকের স্ত্রীকে ডেকে সুষ্ঠ্যু সমাধানের চেষ্টা করেছি। জোমাত অত্যান্ত গরিব মানুষ।
ঘটনার সত্যতা জানতে মানিকের সাথে ইমু নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হন। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান। পরবর্তীতে তাকে একটু থামার অনুরোধ করলে তিনি সাংবাদিকদের দিকে নানা ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দেন। আবারও তাকে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমি প্রতারণা করিনি বরং জোমাত আলী-ই আমার সাথে প্রতারণা করেছেন।
এদিকে জোমাতের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, আমি ধার
-দিনা করে, অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই টাকা যোগাড় করেছিলাম। এখন এতো বড় ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার স্বামী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়েছিলো। এখন আমি না পারছি ঋণের টাকা পরিশোধ করিতে, আবার না পারছি স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে। আমার সাজানো সংসার ও আমার স্বামীর এই করুণ পরিস্থিতির জন্য যারা দ্বায়ী, সবার বিচার চাই।