কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বাস্তুহারা হচ্ছে একের পর এক পরিবার। ‘কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদ`‘ভাঙনে আমরা ফকির হয়া গেছি। জমি গেইছে, ভিটা গেইছে। বাড়ি সরাইতে সরাইতে হাফসি গেছি। আমারগুলার এতি কাইয়ো চোখ দেয় না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মজিবর রহমান। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নাজেহাল কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার এ বাসিন্দা। শুধু মজিবরের নয়, ব্রহ্মপুত্রের আগ্রাসনে বাস্তুহারা হয়েছেন ওই এলাকার অন্তত এক হাজার মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েক শ পরিবার।
বেগমগঞ্জের মোল্লারহাট ও কডডার মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। হুমকিতে আছে একের পর এক স্থাপনা ও ফসলি জমি। ভাঙনে বিলীনের অপেক্ষায় মোল্লারহাট বাজার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গেল বর্ষায় বাজার রক্ষায় কিছু জিও ব্যাগ ফেলে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের খরস্রোতে সেসব জিও ব্যাগ নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে। তীব্র ভাঙন চললেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে বাজারের কাছেই চলছে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন।
এতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়দের। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ছয়বার ভিটে সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আরমান আলী। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি ভিটে সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। আরমান আলী বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাইলং, বুকের ভিতরাটা ভাঙি যায়। এতোবার ভিটা ভাঙে তাও কাইয়ো শোনে না, দেখে না। আমরা খুব অসহায়।’ ভাঙনের শিকার মজিবর, সেকেন্দার, সোহাগসহ ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ বিলীন হয়েছে। ছয় মাসে অন্তত আট শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত হাজার একর। বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘গত ছয় মাসে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে অন্তত ১ হাজার ২০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। একপাশে ব্রহ্মপুত্র অন্যপাশে ধরলা ভাঙছে। আমরা বাধ্য হয়ে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে এরা যাবে কোথায়, খাবে কী?’ ভাঙনে হাজারো মানুষের বাস্তুহারা হওয়ার খবরে সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমি মোল্লারহাটে গিয়েছি। বাজার টেকানোর জন্য যা করার, তা করতে হবে।
বড় ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এটা (মোল্লারহাট বাজার) এ বছরই বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছি। পাশাপাশি আমি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করব।’ কুড়িগ্রামে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য আমি ওই এলাকায় যাচ্ছি। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এলাকা পরিদর্শন করে আমরা প্রকল্প পাঠাব। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেব।’