ছয় দিন পর ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন কুড়িগ্রামের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ডিলাররা। ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ধর্মঘট গত মঙ্গলবার প্রত্যাহার করেন তাঁরা। এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। ডিলাররা বলছেন, সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করলে প্রতি সিলিন্ডারে তাঁদের ৫০-৬০ টাকা লোকসান গুনতে হয়, আবার বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করলে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে।
উভয়সংকটে পড়ে তাঁরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হন। পরে জনভোগান্তি বিবেচনায় তাঁরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। কুড়িগ্রাম শহরের বেশ কিছু পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে জানা গেছে, দোকানে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকার ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১ হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করলেও পাইকারি ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং খুচরা ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বাধ্য হয়ে বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন। গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে যাওয়া রেহানা নামের এক গৃহিণী বলেন,‘এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় আমরা চাপে আছি। সংসারের খরচ সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে বাধ্য হয়ে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। উপায় নেই, রান্না তো করতে হবে।
তবে সরকারের উচিত জনভোগান্তি কমাতে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা।’ কুড়িগ্রামের এলপিজি গ্যাস ডিলার বিআর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বদরুল আহসান মামুন জানান,‘সরকার সিলিন্ডার ভর্তি এলপিজি গ্যাসের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কোম্পানিগুলো বেশি দামে আমাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করছে। ফলে আমরাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি।
আবার বেশি দামে বিক্রি করলে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আমাদের জরিমানা করছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়ে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পাশের জেলা থেকে গ্যাস সিলিন্ডার এনে আরও বেশি দামে বিক্রি করা শুরু করে। সেই দায়ও আমাদের ওপর পড়ছিল। ফলে জনভোগান্তিসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। এখন গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখলেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বদরুল আহসান মামুন আরও জানান,‘জেলা প্রশাসনের অভিযানে আমরা গ্যাস কেনার চালান দেখালেও তারা কোনো কিছু মানতে চান না। সরকারনির্ধারিত দামের অজুহাতে তারা জরিমানা করে। আমরা তো সিলিন্ডারপ্রতি ২০-৩০ টাকার বেশি লাভ করছি না।’ এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত থাকবে। ডিলারদের গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে সরকারনির্ধারিত মূল্যের ‘অসামঞ্জস্যতা’ নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব।