বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিছিলে গিয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্র মাহিম হোসেন। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বামন পাড়া গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের বড় ছেলে স্কুলছাত্র মাহিম হোসেন (১৭)। পড়ত চাঁদট গ্রামের ইয়াকুব আহমদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১৬ দিন পর গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রক্ত বমি আর শ্বাস কষ্টে মারা যায়। ঐদিন বিকেলে গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে কাজ শুরু করে মাহিম। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ছোট ফুপু রহিমার উৎসাহে ৪ আগস্ট মিছিলে যোগ দিতে উপজেলা সদরে যায়। কিন্তু সেখানে পুলিশের বাধার মুখে সঙ্গীদের ছেড়ে কুষ্টিয়ার উদ্যেশ্যে বাসে ওঠে। পাশের উপজেলা কুমারখালীতে গিয়ে বাস থেকে নেমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুলিশের তোপের মুখে পরে। মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের মধ্যে পরে মাহিম। স্থানীয় নারীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করে।
বাড়ি ফিরে মাহিম আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাঁর মুখে ও শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে গত শনিবার সকাল থেকে প্রচণ্ড জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে সেবাও নেয়। গত সোমবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে মাহিমের গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ পৌঁছায়। এ সময় তার বাড়িতে গ্রামের অসংখ্য নারী-পুরুষ ও সহপাঠীরা ভিড় করে। ইয়াকুব আহমদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামাজের পর চাঁদট কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে মাহিমের মা রেহানা পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ঘরে তাঁর বিছানা ঘিরে গ্রামের নারীরা ভিড় করেছে। মাঝে মাঝে তিনি বিলাপ করে বলছেন, ছেলে এত বেশি অসুস্থ তা বুঝতে দেয়নি। নিহতের বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে তার ছেলে আন্দোলন করেছে। উপজেলা সমন্বয়করা তার সঙ্গে ছিল। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।