কুষ্টিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান আতা ও তার স্ত্রী’র ১১শ কোটি টাকার অনুসন্ধানে দুদক

কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ২৫৬ বার পঠিত

 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা ও তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষক শাম্মী আরা পারভীনের নামেও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত শত কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তার এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে আতাউর রহমান ও তার স্ত্রীকে সম্পদের বিবরণী দাখিলের নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো: জাকারিয়া কর্তৃক ৩০/০৩/২০২২ তারিখে স্বাক্ষরিত ০০.০১.৫০০০.৭৩৪.০১.০১২.২১-৬০৯ নং স্মারকের নোটিশে বলা হয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী কুষ্টিয়া পৌরসভার ৪ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাম্মী আরা পারভীন তার স্বামীর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে তাদের সব সম্পত্তির হিসাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আতাউর রহমান মূলত ২০১২ সালে ভেড়ামারা থেকে কুষ্টিয়া শহরে আসেন। সে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোল দাগ গ্রামের আব্দুস সাত্তার প্রমাণিকের পুত্র। আতাউর রহমান আতা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি কুষ্টিয়ায় শহরের মজমপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। ওই সময় থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে থাকেন এবং হাতিয়ে নেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ। ৯ বছরের ব্যবধানে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছান। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।

দুদকের নোটিশ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনকে বুধবার ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে সকল সম্পত্তি হিসেব দাখিল করতে বলা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় যখন তিনি আসেন তখন তার কোন সম্পত্তি না থাকলেও তিনি বাগিয়ে নেন আওয়ামীলীগের নমিশন। এরপর তাকে আর পিছে ফিরে দেখতে হয়নি। ২৬-০২-২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনের সময় আতাউর রহমান আতা তার নির্বাচনী হলফনামায় তার নামে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেন। কিন্তু মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার ডি ব্লকে ৫ কাঠার দুইটি ৬ ও ৭ নং প্লটে নির্মান করেছেন ১০ তলা হাইয়ারেজ বিল্ডিং।

ভেড়ামারা সাতবাড়িয়ায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ কাঠা জমি,ঢাকার উত্তরখান এলাকায় ৬ কাঠা জমি যার মূল্য ২ কোটি টাকা। ওই জায়গায় ১০ তলা বিল্ডিং নির্মানাধীন। ভেড়ামারা শহরে ২৫ বিঘা জমির ওপর বাগান তৈরী, ভেড়ামারা শহর এলাকায় ৯০ লাখ মূল্যে ২৪ শতক জমি, এছাড়া ভেড়ামারায় আরো প্রায় ১০ টি জমি তিনি শত কোটি টাকায় ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের হাইস্কুল মার্কেটের এ ব্লক দ্বিতীয় তলায় ৬ টি দোকান তিনি জোরপূর্বক তিনি নামে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া শহরের বড় দামী শপিং মল পরিমল টাওয়ারে তার রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের ২ টি দোকান, কেন্দ্রিয় সমবায় মার্কেটে ২২ নং দোকানের মালিকও আতাউর রহমান আতা। এছাড়া জেলা পরিষদের বিভিন্ন মার্কেট এবং খাস জমি তিনি তার নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। কুষ্টিয়ার বটতৈল পাওয়ার গ্রীডের মার্কেটে ৮ টি দোকান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনের নামে বলে নিশ্চিত করেছে কর্ত্তৃপক্ষ। ব্যাংক এশিয়ার পাংশা শাখায় আতাউর রহমান আতার নামে রয়েছে ২ কোটি টাকা।

পুর্বালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক ,ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কুষ্টিয়ার প্রধান ডাকঘরে স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনের নামে রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার ব্যবহৃত দুইটি ল্যান্ড ক্যুজার গাড়ি যার মূল্য ২ কোটি টাকার বেশী। খুলনার দাকোপ ও পটুয়াখালীতে ২ শত বিঘা জমির ওপর রয়েছে মাছের ঘের। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা জমি, নগদ অর্থ সহ বিপুল পরিমান সম্পত্তি রয়েছে আতার।

এই বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী জানান, দুদকের তদন্তে আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীন এর বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ প্রমানিত হলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে ।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মোঃ মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমাদের কাছে যে তথ্য দুদক থেকে চেয়েছে আমরা যতদূর পারি দিয়েছি ।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি করে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য তাকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক অভিযোগটি খতিয়ে দেখছে। ১৩ই এপ্রিলের মধ্যে রেকর্ড পত্র ও তথ্যাদি প্রেরিত পত্রে ছকের মাধ্যমে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা পরিষদ সহ বিভিন্ন দপ্তরে উক্ত চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দুদক যদি আমার ও আমার স্ত্রীর নামে মামলা করে আমি এটা ওভার কাম করতে পারব। যা আমার কাছে প্রদর্শিত আছে। তবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি এটাও বলেন, উক্ত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রতিহিংশামূলক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর