কুষ্টিয়া নির্বাচন অফিসের অব্যবহৃত পন্য বিক্রিতে অনিয়ম ও দূর্নীতি, দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীর বেতন, অফিসের গাড়ির গ্যারেজ নির্মান বাবদ দূর্নীতি, অফিস মেরামত না করে বিল উত্তোলন, সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিয়োজিত প্রশিক্ষনার্থী প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসদের নির্বাচনী প্রশিক্ষনের টাকা আত্মসাৎ , নির্বাচনী সরঞ্জমাদী ক্রয়ে দূর্নীতিসহ অস্থায়ী কেন্দ্র ও বুথের বরাদ্দ অর্থ আত্মসাতের নানা অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বিক্রয় কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, ২০১৯ সালে নির্বাচন অফিসের অব্যবহৃত ৩৩টি জেনারেটের, প্রিন্টার ১২টি, মনিটর ৭টি, সিপিইউ ৬টি, টাইপরাইটার ৪টি, স্ক্যানার ৩টি, ইউপিএস ১০টি, পাওয়ার সনিক ১টি, ফটো ম্যাশিন ১টি , ফ্যাক্স মেশিন ১টি বিক্রির জন্য গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে বাজার মূল্য যাচাই না করেই জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো: আনিছুর রহমান ঠিকাদারের কাছ থেকে ব্যাক্তিগত আর্থিক সুবিধা নিয়ে আনুমানিক ২০লক্ষ টাকার পন্য নামমাত্র ৫১ হাজার ১শত টাকার নিলাম দেখিয়ে বিক্রি করেন।
জেলা নির্বাচন অফিসে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারী আতিকের নামে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও আতিক জানান, অদ্যবধি আমি নির্বাচন অফিস থেকে এধরনের কোন টাকা পায়নি। আমি এনআইডি সেক্টরে কাজ করি, তবে দৈনিক ভিত্তিতে না।
এছাড়া কুষ্টিয়া নির্বাচন অফিসে গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ নির্মানের ৯লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা ব্যায় দেখালেও নির্মান সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের একটি গ্যারেজ নির্মানে সর্বোচ্চ ব্যায় ৪লক্ষ টাকা হতে পারে । তবে এই নির্মান কাজে নিয়োজিত একটি সুত্র জানান, ঠিকাদারের সাথে ভাগাভাগি করে এই টাকা আত্মসাৎ করেন এই সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিস সংস্কার কাজের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ না করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান।
কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দিন করোনা সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস, মাক্স, হ্যান্ড ওয়াস ও ¯েপ্র, হ্যান্ড সেনিটাইজার, হেক্সিসল, টিস্যু পেপারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বাবদ প্রতি ভোট কক্ষের জন্য ২শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে দ্বায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা নির্বাচন অফিসের মাধম্যে প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শুধুমাত্র প্রতি কক্ষের জন্য ১টি করে হ্যান্ড সেনিটাইজার ও পকেট টিস্যু দেয়া হয়। যার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ হলেও ১শত টাকা। ফলে জেলার ৬ টি উপজেলার মোট ৩৭শত ৮টি ভোট কক্ষের জন্য ৭ লক্ষ ১৬ হাজার ৬ শত টাকা বরাদ্দ এলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৩ লক্ষ ৭হাজার ৮শত টাকা ব্যায় হওয়ার কথা।
ইউনিয়ন নির্বাচনে দ্বায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাদের নির্বাচনী দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষনের জন্য জনপ্রতি ১শত ৩৫ টাকার মালামাল দেয়ার কথা থাকলেও সর্বোচ্চ ৫০ টাকা মুল্যের ১টি পলিমার ফাইল, ১টি পেন, ১টি প্যাড দেয়া হয়। যা জেলা নির্বাচন অফিসার কোন ধরনের দরপত্র ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় মালামাল ক্রয় করে প্রশিক্ষনার্থীদের সরবরাহ করে। যা ক্রয়কৃত মালামাল সবই নিম্নমানের এবং ব্যবহারে অনুপযোগী। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের দায়িত্বের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের একজন প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রতিটি কক্ষে এজন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২জন পোলিং অফিসরের প্রশিক্ষন দেয় বাধ্যতামূলক।
কিন্তু কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের ১১৬টি কেন্দ্রে ২হাজার ২শত ১জন অতিরিক্ত আরো ১১০জন মোট ২হাজার ৩শত ১১ জনকে প্রশিক্ষন দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রশিক্ষন দেয়া হয় আনুমানিক ২হাজার জনকে। এভাবে জেলার ৬টি উপজেলায় ৬২টি ইউনিয়নের মোট ৬শত ৩৮টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩হাজার ৭শত ৮টির জন্য ১১ হাজার ৭শত ৬২ জনের প্রশিক্ষনসহ আরো অতিরিক্ত ৫% এ ৫শত ৮৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষন দেয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও প্রশিক্ষন দেয় হয় মোট ৯হাজার ৫শত জনকে। প্রতিটি প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য ৫শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও ১২হাজার ৩শত ৫০ জনের মধ্যে প্রশিক্ষন না করিয়ে ২হাজার ৮শত ৫০জনের বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষন ও প্রশিক্ষনকালিন ষ্টেশনারী বাবদ বরাদ্দে অর্থে মুল্যে যার পরিমান প্রায় ১৮ লক্ষ ৯হাজার ৭শত ৫০টাকা।
ইউনিয়ন নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষনে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৩৫ জন থাকার কথা থাকলেও প্রশিক্ষনার্থীদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, প্রশিক্ষনের সময় ৮০ থেকে ৯০ জনকে নিয়ে আয়োজন করা হয় প্রতিটি নির্বাচনী প্রশিক্ষন ক্লাসের।
সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিন্মমানের সরঞ্জমাদি সরবরাহ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো: হাসান আলী (ঘাড়া মার্কা) অভিযোগ করেন, নিম্নমানের সিলপ্যাডে ভোটারদের ভোট প্রদানে ভোগান্তির কারনে তিনি নিজে ১০টি সিল প্যাড কিনে দেন ৩নং মহানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন অফিস এবং সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ অনিয়ম প্রসঙ্গে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো: আনিছুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন তবে এজি অফিসসহ নিজেদের অফিস খরচ বাবদ সরকারি অর্থআত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।