মেহেরপুরের গাংনীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমিহীনের ঘর নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাংনী পিআইও অফিসের কার্য সহকারী শাহিন রেজা।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের হিজলবাড়ীয়া উত্তরপাড়ার ভূমিহীন আয়নাল হকের ঘর নির্মাণের ফলে তিনার পিছনের অন্ততঃ ৫ টি পরিবারের সদস্যদের চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, হিজলবাড়ীয়ার আয়নাল হক নামে যিনাকে ভুমিহীনের ঘর দেওয়া হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে তিনি ভুমিহীন নয়, রয়েছে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি। তাছাড়া তিনার ছেলে শামীম রেজা পাপ্পু প্রায় ১০ বছর ধরে বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশ বিজিবিতে চাকুরীরত অবস্থায় রয়েছেন।
হিজলবাড়ীয়া উত্তরপাড়ার ভুক্তভোগী আতিয়ার রহমানের পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি ঘর না থাকা ও অস্বচ্ছল হওয়ার কারণে মৃত আমীর উদ্দিনের ৩ ছেলে আয়নাল, হান্নান ও ফায়নালকে আতিয়ার রহমানের বাড়িতে মানবিক কারণে বসবাস করতে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ২ ভাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়নাল হক। ইতিপূর্বে বাড়ির ভিতরে থাকলেও বর্তমানে রাস্তার সামনে (আতিয়ারের বাড়ির সামনে) বসবাস শুরু করেছেন সরকারি জমি বলে। এতে করে পিছনে আতিয়ার রহমানের ছেলে ইকরামুল হকসহ আশেপাশের আরও ৪টি পরিবারের সদস্যদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ির সামনের পজিশন ছেড়ে দিতে বললে মারধরসহ খুন জখমের হুমকী-ধামকী দেওয়া হয়। এনিয়ে ইতিপূর্বে আতিয়ার রহমান ও তার বড় ছেলের পা ভেঙে ও মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকে ক্ষমা চেয়ে ও বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন বলে জানালেও এখন সরকারি ও খাস জমিতে আছেন বলে দাবী করছেন। তাছাড়া ছেলে বিজিবিতে চাকুরী করার সুবাদে ক্ষমতার জোরে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন এবং ইতিমধ্যেই পিআইও অফিসের কার্য সহকারী শাহিন রেজার যোগসাজশে ভুমিহীনের ঘর নির্মাণে মেতেছেন। এতে সহযোগিতা করেছেন, ভাটপাড়া ভূমি অফিসের তহসিলদার গাড়াডোব গ্রামের নূরুল হুদা।
ভুক্তভোগী আতিয়ার রহমানের ছেলের স্ত্রী রোকসানা জানান, আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় অসহায় পেয়ে বাড়ির সামনে ভুমিহীনের ঘর নির্মাণ করছেন আয়নাল হক। পুলিশ দাঁড় করিয়ে জোর পূর্বক নাকি শাহিন রেজা ভুমিহীনের ঘর তৈরি করবেন। মেহেরপুর জজ কোর্টের প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী আয়নাল হককে উক্ত নালিশী জমির আকার আকৃতি পরিবর্তন ও জমিতে কোন ঘরবাড়ি নির্মাণ বা আমাদের ভয়ভীতি না দেখানো এবং শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া ৩১ অক্টোবর-২০২২ কগনিজেন্স শুনানীর কথা রয়েছে।
তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পিআইও অফিসের শাহিন রেজা কিভাবে ভুমিহীনের ঘর নির্মাণ করছেন।
এবিষয়ে পিআইও অফিসের কার্য সহকারী শাহিন রেজা’র মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেনি।
ভাটপাড়া ভূমি অফিসের তহসিলদার নূরুল হুদাকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ইতিপূর্বে এসিল্যান্ড নাজমুল আলমসহ আমি উক্ত জমি সরেজমিনে গিয়েছি। সেসময় এসিল্যান্ড ভুমিহীনের ঘর নির্মাণের ব্যাপারে কিছুই বলেনি। কিন্তু দীর্ঘদিন পর হঠাৎ শাহিন রেজা উক্ত জমিতে ভুমিহীনের ঘর নির্মাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন তা বোধগম্য নয়। তবে (রবিবার) ইউএনও স্যারের সাথে আলোচনায় বসবেন বলে জানান।
এদিকে গত ২৭ অক্টোবর-২০২২ ঘর নির্মাণে গাংনী থানা থেকে নিষেধ করা সত্বেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২৮ অক্টোবর আবারও ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার (মিস্ত্রী) আব্দুস সালামসহ কয়েকজন।
তিনারা জানান, শাহিন রেজা’র নির্দেশে ঘর নির্মাণ কাজ করছেন। তবে ভুমিহীনের ঘর পাওয়া আয়নাল হক জানান, আমি এবিষয়ে জানিনা। আমার দোষ নেই। আমি ঘর করবোনা বলে জানিয়েছি।
গাংনী থানা পুলিশ থেকে ঘর নির্মাণে নিষেধের কথাও জানালে শাহিন রেজা নাকি বলেছেন ঘর করবো আমরা তোমার কি? এবলে নির্মাণ কাজ শুরুর নির্দেশ দেন মিস্ত্রীকে।
এ ঘর নির্মাণের বিষয়ে সাহারবাটী ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান এমনকি ইউপি সদস্য রিপনও নাকি অবগত নন বলে জানা যায়।
গাংনী থানার এসআই সইবুর রহমান জানান, আমি ২৭ তারিখে ঘর নির্মাণে নিষেধ করলেও তা অমান্য করে ২৮ অক্টোবর আবারও ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন মিস্ত্রীরা। শাহিন রেজা নাকি ঘর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ২৮ তারিখে পুলিশের উপস্থিতিতে সেইসময়ের জন্য কাজ বন্ধ করে মিস্ত্রী।
গাংনী উপজেলা প্রকল্প কর্মকতা নিরঞ্জন চক্রবর্তীকে বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে চাইলে শাহিনের সাথে কথা বলে জানাবেন বলে জানান।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে রবিবার (৩০ অক্টোবর), ভুক্তভোগীদের কি কি সমস্যা তা বিস্তারিত লিখিত অভিযোগে জানালে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।