মেহেরপুরের গাংনীতে আসমা খাতুন(২২) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে, সে আত্মহত্যা করেছে নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে এ নিয়ে বেশ ধোয়াশা রয়েছ। তবে পারিবারিক কলহ তার মৃত্যুর কারণ বলে ধারনা করছে প্রতিবেশীরা। নিহত আসমা খাতুন উপজেলার বামন্দী পাড়ার সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাঈমুর রহমান ইরান এর স্ত্রী ও তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের করমদি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আমিরুল ইসলামের মেয়ে।
নিহত আসমা খাতুনের ননদ সুমাইয়া আক্তার জানান, গত ৬ বছর আগে আসমা ও আমার ভাইয়ের মধ্যে প্রেম সম্পর্কে গড়ে ওঠে। এক বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ হয়। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে বাসায় কেউ না থাকায় সে তার নিজ কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করে। তখন পরিবারের ও স্থানীয় লোকজন ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বামন্দী সোনার বাংলা ক্লিনিকে(হুদার ক্লিনিক) নিয়ে যায়। পরে তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে আসমাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সে কী কারনে আত্মহত্যা করেছে তা আমরা জানি না তবে সে মানষিক রুগী ছিল।
এদিকে আসমার বাবার সাথে যোগাযোগ করলে অসুস্থতার অযুহাতে ফোন রিসিভ করে আসমার বড় বোন আয়েশা খাতুন। প্রথমে এ ব্যাপরে কোন কথা বলতে রাজি হচ্ছিল না সে। পরে সে জানায়, আমার বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন হঠাৎ করে আমার চাচাতো ভাই কে ফোন দিয়ে বলে মোটরসাইকেলের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে আসমা। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। পরে শুক্রবারে(১৪মে) দুপুরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি সে তার নিজ কক্ষে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।
আসমার ভাসুরের ছেলে জয় জানান, আমার ছোট কাকা মোটর সাইকেলের চাবি আনার জন্য বাসায় পাঠায়। তখন কাকিকে অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন দরজা খুলছিল না তখন জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে দেখি তাকে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। পরিবারের অন্য সদস্য কে ডেকে দরজা ভেঙে কাকিকে আমরা বের করি।
তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে নাঈমুর রহমান ইরান এর বড় ভাবি বেশ উত্তেজিত হয়। চাঁপার জোরে ধামা চাঁপা দেওয়ার চেষ্টা করতে কম করেনি সে।
নিহত আসমা খাতুন এর স্বামী নাঈমুর রহমান ইরান জানান, আসমার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আমরা বাসায় নিয়ে আসছি।যদি কিছু বলার থাকে বাসায় এসে তার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেখে যান।
প্রতিবেশীদের কেউ কেউ জানান, আসমা সাথে বিভিন্ন সময় তার পরিবারের লোকজন অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করত। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে তাকে মানসিক অত্যাচার করে আসছিল। সেই অত্যাচারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে ধারনা তাদের। তবে গত বৃহস্পতিবার যখন আসমা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় আসমা শশুরের সাথে মোটরসাইকেলে আসার সময় চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে।
গাংনী থানার ওসি মোঃ বজলুর রহমান জানান, নিহত আসমার বাবার পরিবার থেকে যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্যঃ সিলিং ফ্যানের যেখানে আসমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে দাবি করছে পরিবারের লোকজন সেই জায়গাটিতে ওড়না বাধার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যেখানে ওড়না বাধার কথা বলছে ফ্যানের সেই স্থান ধূলিকণায় ভর্তি।
গত ৩ সপ্তাহ আগে আসমার ৪১ দিনের শিশু বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু নিয়েও লোকমুখে বিভিন্ন রকম তথ্য প্রচারিত আছে।