গাংনীতে বোনের স্কুলে মিড ডে মিলের টাকা দিতে গিয়ে মায়ের সামনে শিক্ষকদের মারপিটের শিকার ঐ ছাত্রীর ভাই!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৫২ বার পঠিত

মেহেরপুরের গাংনীতে মিড ডে মিলের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীর ভাই খাব্বাব বীন সাইফুল (২২) নামের একজন কে পেটালেন কয়েকজন শিক্ষক ও এক্স টেন এর ছাত্ররা। সোমবার (৮ আগস্ট), বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় মারধরের শিকার খাব্বাব জোড়পুকুরিয়া গ্রামের প্রবাসি সাইফুল ইসলামে ছেলে বলে জানা গেছে। খাব্বাব জানান, তার ছোট বোন হাপসা জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী।

বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে মিড ডে মিলের জন্য ৫ কেজি চাউল, ১ কেজি ডাউল, ১৫০ টাকা ও চুল কামানোর জন্য ১০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। যদিও মিড ডে মিল অস্বাস্থ্যকর বলে অভিযোগ রয়েছে। খাব্বাব মিড ডে মিলের টাকা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম রসুলের কাছে যান।

সেখানে টেবিলে হাত রেখে দাঁড়ালে শিক্ষক তাকে আচরণগত সমস্যা আছে বলে জানান। এনিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে শিক্ষক গোলাম রসুল তাকে মারধর করেন। খাব্বাবের মা দিলরুবা খাতুন জানান, আমার মেয়ে হাপসা’র মিড ডে মিলের ২ মাসের ১০ কেজি চাউল, ২ কেজি ডাউল ও টাকা দিতে আমার ছেলে শ্রেণীকক্ষে গেলে টেবিলে হাত রাখায় আচরণগত সমস্যা আছে বলে শিক্ষক গোলাম রসুল ছেলে খাব্বাব কে মারধর করে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের করে দেন এবং পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী, সহকারী শিক্ষক আব্দুল হান্নান, মিজানুর রহমানসহ এক্স টেন এর আকাশ, তানভীর, পাপ্পু ও মামুনসহ ৮/১০ জন মিলে আমার সামনে ছেলেকে মারধর করে আহত করেন। এসময় বিদ্যালয় থেকে বের করে দিলে আমরা জোড়পুকুরিয়া বাজারে অবস্থান নিই। এসময় অন্যান্য অভিভাবকরাও প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।

 

সেখানে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে শতশত প্রতিবাদী মানুষের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষক গোলাম রসুল বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান। তবে অসুস্থতার কারণ হিসেবে বাড়ি পাঠানো হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত হন। সাবেক ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন জানান, শিক্ষকদের আচরণ অনেকটা নীলকরদের মতো।

 

সব কিছুই তাদের ইচ্ছে মতো করা হয়। অভিভাবকদের মতামতের তোয়াক্কা করেননা তারা। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তারা মুখ খুলতে সাহস পাইনা। স্থানীয়রা জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে থাকার জন্যও বাধ্য করা হয়। যদিও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীরা অঘোষিত ছাত্রাবাসে থাকায় নানা অপকর্মের ঝুঁকিও রয়েছে। তিনারা জানান, বিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোচিং বাবদ ৫০০ টাকা করে নেন প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী। যা প্রধান শিক্ষকের প্রতি মাসে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার বানিজ্য। এছাড়াও চুল কাটা বাবদ ৫০ টাকা করে মাসে ২ বার ১০০ টাকা করে আদায় করা হয় বলেও তিনারা জানান।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী জানান, খাব্বাব প্রথমে শিক্ষক গোলাম রসুলের শরীরে হাত ওঠান। এসময় শিক্ষক ও ছাত্রদের হাত থেকে বাঁচাতে আমি তাকে সেভ করি এবং বিদ্যালয়ের বাইরে পাঠিয়ে দেই। তবে চুল কামানো বাবদ ১০০ টাকা ও অস্বাস্থকর মিড ডে মিলের কথা তিনি অস্বীকার করেন। গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, এভাবে কোন ছেলের শরীরে কোন শিক্ষক হাত তুলতে পারেন না। মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। যদি কোন শিক্ষক ছাত্রের শরীরে এমনভাবে হাত তুলে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাংনী থানার এস আই মাসুদ বলেন, ওসি স্যার সাক্ষীতে ঢাকায় থাকায় তিনার নির্দেশ অনুযায়ী আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। একইসাথে ইনজুরি খাব্বাব কে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পরামর্শসহ থানায় অভিযোগ করার কথা বলি। লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর