গাংনীতে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে দূর্ণীতির আখড়া পরিণত হয়েছে রেজিষ্ট্রি অফিস
স্টাফ রিপোর্টারঃঅনিয়ম,দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে গাংনী সাব রেজিষ্ট্রি অফিস।মাহফুজ রানা যোগদানের পর থেকে দলিল লেখক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে নানা কারণ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পকেটস্থ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এখানকার দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারীরা ডিআর মহোদয়ের অডিট ব্যয়, নজরানা ও দলিল ফাইলিংয়ের নামে দলিল প্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা ও নকল সরবরাহের জন্য এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।এসব টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে অফিস সহকারী হাঁসনা হেনা বকুল।ওই টাকাগুলো সাব-রেজিষ্টার সহ সকল কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে থাকেন।
গাংনী সাব রেজিষ্ট্রী অফিসের সরকারী নিয়মানুযায়ী ইউনিয়নের কৃষি জমি ৭%, অকৃষি জমি ৮%,পৌর সভার মধ্যে ২%, প্রিন্টসহ হলফনামা বাবদ ৩০০ টাকা, ই-এ-এন বাবদ ২২৫ টাকা,পে- অর্ডার , নোটিশ বোর্ড ফিস বাবদ ২০০ টাকা ও দলিল লেখকদের লেখা খরচ বাবদ ৮২৫ টাকা উল্লেখ থাকলেও মাহফুজ রানা
দলিল লেখক সমিতির মহুরীদের চাপ দিয়ে জিপি দলিলে সরকারী ফিস মাত্র ৬০০টাকা।সেখানে ১হাজার ৭০০শত টাকা আদায় করছেন।
কবলা দলিলে সরকারী ফিস মাত্র ৩০০ টাকা।দলিল ফাইলিংয়ের নামে সেখানে আদায় করা হচেছ ৬৫০টাকা, নকল সরবরাহের জন্য সরকারী ফিস ৪৫০টাকা।সেখানে আদায় করা হয় ১হাজার থেকে ১২০০টাকা।
নামবারিং দলিলে ২হাজার টাকা আদায় করছেন।৫নং মসজিদ উন্নয়নের জন্য দলিল প্রতি ২০টাকা উত্তোলন করা হলে।সেই টাকার ভাগ চেয়েছেন মাহফুজ রানা।তিনি যোগদানের পর থেকে মহুরীদের মাধ্যমে নানা কারণ দেখিয়ে অলিখিত সিন্ডিকেট তৈরী করে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।
এছাড়াও স্ট্যাম্প কম্পিউটার কম্পোজ না করে রেজিস্ট্রি কাজ সম্পাদন করছেন।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্টার জানান, অফিসের ভিতরে যথা নিয়মেই কাজ কর্ম চলছে। বাইরে কি হচেছ সেটা তিনি জানেন না।
উল্লেখ্য: গাংনীতে সরকারি বিধি মোতাবেক সরকারী কর্মকর্তা কর্মস্থলে থাকার কথা থাকলেও সেখানে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে বাড়ীতে অবস্থান করায় ১সপ্তাহ অফিস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতা বিক্রেতা ও দলিল লেখকরা।
গাংনী সাব রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান,প্রায় ৪ মাস গাংনী সাব রেজিস্ট্রারের অফিস বন্ধ থাকায় রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখকসহ অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগন কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন,সরকার ২৬ মার্চ থেকে সরকারী ভাবে লকডাউন ঘোষনা করার ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি।লকডাউনের আগেও ১মাস সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় বন্ধ হয়েছিল সকল কার্যক্রম।আমরা সরকারী সহযোগীতার জন্য বিভিন্ন জয়গায় আবেদন করলেও আমরা কোন সহযোগীতা পাইনি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে অফিসের সকল স্টাফ।
তিনি আরো বলেন,গাংনী উপজেলার সকল কর্মকর্তা নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকলেও আমাদের স্যার ২৫মার্চ সকাল ১১টার সময় কর্মস্থল ত্যাগ করে নিজ বাড়ী ঢাকাতে রয়েছেন।স্যার কবে আসবে ঠিকনাই।ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ভুক্তভোগী এলাকার মানুষ।
সরকার লকডাউন প্রত্যাহার করে নিলেও আমাদের স্যার কর্ম¯’লে না থাকায় আবারো এক সপ্তাহ বন্ধ রয়েছে সকল কার্যক্রম।
এদিকে,জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারও হারা”েছ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এছাড়া এ অফিসের সঙ্গে জড়িত প্রায় শতাধিক মহুরা ও নকলনবীশ লেখকরা বেকার ও অলস সময় পার করছেন।
অফিস সুত্রে জানা যায়, গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইমরুল হুসাইন ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর এখান থেকে বদলি হওয়ার পর কোন সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় ১মাস বন্ধ হয়েছিল গাংনীর সাব রেজিস্ট্রী অফিস।নতুন সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা ফেব্রæয়ারির ৯ তারিখে এখানে যোগদান করেন।
যোগদানের পর থেকে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়।মাত্র ১৭দিন অফিস চলার পর করোনা প্রতিরোধে সরকার লকডাউন ঘোষনা করেন।
সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সকল কর্মকর্তা কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ থাকলেও সেখানে মাহফুজ রানা সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৫শে মার্চ কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
ফলে আবারো জমি রেজিস্ট্রী অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।বন্ধ হওয়ার কারণে এ উপজেলার শত শত একর জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
গাংনী উপজেলা আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে এ জেলার অর্ধেক।তাই প্রতি মাসে ১হাজার থেকে ১হাজার ৫০০ দলিল রেজিস্ট্রী হয়ে থাকে এ উপজেলায়।
গাংনী শহরের হাসপাতাল বাজারের হায়দার আলী জানান,আমি জমি কিনে দিনক্ষণ ঠিক করে জমি বিক্রেতা বানিয়াপুকুর গ্রামের মুসফিককে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি।জমি বিক্রেতা একজন অসু¯’ মানুষ। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় আমার জমি রেজিস্ট্রী হ”েছ না।জমি রেজিস্ট্রী হওয়ার আগে উনি মারা গেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
গাংনী উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আবুসামা জানান,আমি জমি কিনে বিপদে পড়েছি জমির টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি।কিš‘ রেজিস্ট্রী অফিস বন্ধ থাকায় জমি রেজিস্ট্রী করা হয়নি। সে পরে জমি রেজিস্ট্রী দিতে গড়িমশি করছে।
বানিয়াপুকুর গ্রামের শাহিনুর রহমান বলেন, আমি জমি বিক্রি করতে না পেরে আমার পরিবারকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে পারছিনা।
গাংনী উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফাকের আলী জানান,লকডাউনের কারণে রেজ্রিস্ট্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গাং
নী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ৭০ জন দলিল লেখক ও প্রায় ১৫০ জন সহকারী এখন বেকার জীবন-যাপন করছে।সরকার লকডাউন প্রত্যাহার করে নিলেও আমাদের স্যার কর্ম¯’লে না থাকায় রেজিস্ট্রী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারীরা জানান,প্রতিদিনই দলিল গ্রহীতা,সেবা গ্রহীতারা অফিসে এসে গালাগাল করে যাচ্ছেন । আমরা তাদের কথার কোনো উত্তর দিতে পারছিনা।
এব্যাপারে সাব রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানা জানান, কোন অনিয়ম করেন নি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপান করা হয়েছে।অনিয়মের এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানা গড়িমশি শুরু করে নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করেন।