মেহেরপুর সদর উপজেলার ৩নং আমঝুপি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রঘুনাথপুরে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত সাজিয়ে জমি খারিজের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ এর ওয়ারিশ কন্যা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামের পারভীনা খাতুন উল্লেখ করেন, স্হানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান ডাবলু’র সহযোগিতায় পারভীনা খাতুনের ভাই মিজানুর রহমান মন্টু, বাবলু আলী ও আব্দুর রহিম অর্থের বিনিময়ে আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি শরীক ফাঁকি দিয়ে ওয়ারিশ সনদ নকল তোলে। যেখানে মৃত আব্দুল হামিদের স্ত্রী আছিয়া খাতুন জীবিত থাকলেও মৃত বলে চালানো হয়েছে। একইসাথে পারভীনা খাতুনসহ ফরিদা খাতুন, ফাতেমা খাতুন, ফিরোজা খাতুন ও পাপিয়া খাতুন মোট ৫ টি বোন থাকলেও তা উল্লেখ করা হয়নি।
সনদে শুধুমাত্র মিজানুর রহমান, বাবলু আলী ও আব্দুর রহিমের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আছিয়া খাতুনকে মৃত দেখানো হয়। এভাবে শরীক ফাঁকি দিয়ে ওয়ারিশ সনদ নকল করে
এবং অত্যন্ত লোভী ও কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মিজানুর রহমান, বাবলু আলী ও আব্দুর রহিম ৩ ভাইয়ে মিলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান ডাবলু’র যোগসাজশে রঘুনাথপুর মৌজাস্হ আর এস ১৮নং খতিয়ানভুক্ত আর এস ৮৪১ নং দাগের ০.২০ একর জমির মধ্যে ০.১৮ একর ও আর এস ৮৪২নং দাগের ০.১০ একর মধ্যে ০.০৫ একর জমি মোট ০.২৩ একর জমি বাবদ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেরপুর সদর ও কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভুল বুঝিয়ে ৩,৬৩১(IX-1)/ ২০২০-২১নং মিউটেশন কেসে গত ১৪/১২/২০ তারিখের আদেশ মোতাবেক ১৬৮৯নং খারিজ খতিয়ানে ১৮৯১নং পৃথক হোল্ডিং খুলে নিজেদের নামে পত্তন করে নেয়। একইসাথে উল্লেখিত জমি গ্রাস করার কুমানসে তাদের স্ত্রী মিরা খাতুন, শ্যাম্পু খাতুন ও রওশন আরার নামে গত ২৮/০৯/২১ তারিখে মেহেরপুর আর এস অফিসের ৫২১৪নং রেজিষ্ট্রি বিক্রয় কবলা দলিল সম্পাদন করে নিয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী জীবিত আছিয়া খাতুনসহ তার ৫ মেয়ের এ জমিতে হিস্যামত স্বত্ব থাকলেও তা জাল জালিয়াতি কাগজাদী সৃষ্টি করে সরকারি কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী মিরা খাতুন, বাবলু আলী ও তার স্ত্রী শ্যাম্পু খাতুন এবং আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী রওশন আরার নামে ৫২১৫নং রেজিষ্ট্রি বিক্রয় কবলা দলিল সম্পাদন করে ব্যবহার করে আসছে।
ঘটনা সম্বন্ধে তারা ৫ বোন
অবগত ছিলেন না। লোকমুখে শুনে জাল দলিল সম্বন্ধে অবগত হয়ে লোকজন নিয়ে বাবার ওয়ারিশ সূত্রে জমির হিস্যা দাবি ও দলিল দেখতে চাইলে তার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা অপমান অপদস্হ করে এবং হুমকি ধামকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ভবিষ্যতে জমি দাবি করলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে জানায়।
সুবিচারের আশায় মোকাম বিজ্ঞ চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত মেহেরপুরে বাদী হয়ে মামলা করেন পারভীনা খাতুন।
একইসাথে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেরপুর সদর বরাবর ১৯৫০ সালের জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজা স্বত্ব আইনের ১৫০ ধারামতে বিগত ১৪/১২/২০ তারিখের আদেশ বাতিল বা পুনঃ বিচারের প্রার্থনায় দরখাস্ত করেছেন।
ঘটনা সম্বন্ধে স্হানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমানের যোগসাজশ ও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে জমি পাবেন না হলে ভাইয়েরা পাবেন এমন কথা বলা সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে “জমি আছে ঘর নেই” সরকারের এই প্রকল্পের অধিনে বাড়ি করে দেবার নামে ৪০ জন ব্যক্তির কাছে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, যদিও বাড়ি দেওয়া হয়নি, আশ্রয়ন প্রকল্পের ভিক্ষুক জোসনা বেগমের মেয়ে সাথী খাতুনের খোরপোষের ১৫ হাজার টাকা আত্মসাত ছাড়াও নানা অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীর।
জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত সাজিয়ে জমি খারিজের অভিযোগ সম্বন্ধে আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইতে গেলে তিনাকে পাওয়া যায়নি।
এমতবস্থায় যথাযথ ও সঠিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে বাবার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি ৫ বোন ও মায়ের মাঝে সুষ্ঠু বন্টন ও নকল সনদ প্রদানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান সহযোগিতাসহ ৫০ হাজার টাকা দাবির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ৫ বোন।
এব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেরপুর সদরসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা।