মেহেরপুরে বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়াতে রান্নার চুলাতে জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে গোবরের লাঠির চাহিদা বেড়েছে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বৃষ্টি এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে চুলাতে জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে গোবরের লাঠিকে বেছে নিয়েছেন মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলের গৃহিণীরা।
দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুরে রান্নার কাজে চুলা জ্বালাতে গোবরের লাঠি বা নুন্দা ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও ইদানীং এর ব্যবহার বেড়েছে।
গোবরকে জৈব সার, মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তা এখন জ্বালানীর চাহিদা মেটাচ্ছে।
মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার প্রায় সকল গ্রামেই এখন গোবরের লাঠি বা নুন্দা তৈরি হয়ে থাকে।
৩/৪ টি পাটখড়ি একত্রিত করে তার সাথে গোবর লেপে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় এ নুন্দা। সাধারনতঃ গ্রামাঞ্চলের গৃহিণীরা এ নুন্দা তৈরি করে থাকেন। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের যারা খড়কুটো কুড়িয়ে রান্না করে থাকেন, বিশেষ করে তারাই গোবরের লাঠি বেশি ব্যবহার করছেন। তাছাড়া যারা জ্বালানী কাঠ, বাঁশ, পাটখড়ি, কাঠের গুড়া ও গ্যাস ব্যবহার করেন। মূল্য বৃদ্ধিতে এসব দ্রব্য বাদ দিয়ে এখন গোবরের লাঠির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
গ্রামাঞ্চলে যাদের গরু কিংবা মহিষ রয়েছে তারা গোবরের লাঠি তৈরি করে মজুত করে রেখেছে। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে অন্যান্য জ্বালানী ভিজে যাওয়ায় এখন গোবরের লাঠি ক্রয় করে রান্না করছেন।
গোবরের লাঠির বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২/৩ টাকার লাঠি এখন ৫/৬ টাকা দরে প্রতি পিস লাঠি বিক্রি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রয় করে অনেকে শহরেও নিয়ে যাচ্ছেন।
গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের লাঠি বিক্রেতা জনৈকা মহিলা জানান, গরু রয়েছে এমন ধনী গরীব সকলেই লাঠি তৈরি করেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করা হয়।
হিন্দা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক গৃহিণী বলেন, আগে ২ টাকা পিস দরে বিক্রি করতাম। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে জ্বালানী খড়ির অভাব হওয়ায় এখন ৪/৫ টাকা দরে প্রতি পিস লাঠি বিক্রি করছি।
হিজলবাড়ীয়া গ্রামের জনৈকা গৃহিণী জানান, গোবরের লাঠি প্রায় ১২ মাসই বিক্রি করি। বৃষ্টির কারণে শুকনো খড়ির অভাব অনেকেই গোবরের লাঠি কিনছে। আমরাও সুযোগ বুঝে প্রতিটি নুন্দা ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকায় বিক্রি করছি। তাছাড়া গ্যাসের মূল্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই তা পরিহার করে পাটখড়ি, নুন্দা কিংবা কাঠ ব্যবহার করছেন।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের নুন্দা বিক্রেতা অপর এক মহিলা জানান, আমাদের ৫টি গরু রয়েছে। গোবরের সারের ব্যবহার কমে যাওয়া ও গোবর রাখার যায়গা না থাকায় নুন্দা তৈরি করে থাকি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করি। যখন যার প্রয়োজন এসে ২/৩ টাকা দরে প্রতি পিস কিনে নিয়ে যায়।
গোবরের সার তৈরি করে বিক্রি অপেক্ষা নুন্দা বিক্রি লাভজনক বলেও তিনি জানান। তবে প্রতিদিন সকালে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে নুন্দা তৈরি করতে হয়। এলাকাভিত্তিক গোবরের লাঠিকে বিভিন্ন নামে বলা হয়ে থাকে।