মেহেরপুরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাট চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২
  • ৪২৫ বার পঠিত

 

মেহেরপুরে অনাবৃষ্টি ও খাল বিলে পানি না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছিলো পাট চাষিরা। এক দিকে অনাবৃষ্টিতে ক্ষেতে পাট পুড়ছিলো অন্য দিকে খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট কাটার পর পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলো এ অঞ্চলের পাট চাষিরা। যার ফলে হতাশায় ছিল পাট চাষিরা। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কষ্ট ও হতাশার মধ্যে থাকার পর পাটের আঁশ ছড়ানোর পরও হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সোনালী আঁশের কৃষকরা। দাম ভাল না পাওয়ায় কষ্ট ও হতাশা রয়েই গেলো মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার পাট চাষিদের। চলতি মৌসুমে পাট চাষের শুরুতেই অধিকাংশ কৃষক ভারতীয় নিম্নমাণের ও পুরানো বীজ বপন করায় তা আশানুরূপ না গজানোয় ২য় বারের মতো পাট বীজ বপন করেন কৃষকরা। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ঘনঘন বৃষ্টিপাতে পাটক্ষেতে পানি জমে যায় ফলে পাটের গাছ লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং গাছ চিকন হয়ে বেড়ে ওঠে। তারপরও কৃষক আশা না ছেড়ে পরিচর্যা করতে থাকেন কাঙ্খিত লাভের আশায়। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয় পাট কাটার পর। অনাবৃষ্টির কারণে খাদ-খন্দক, ডোবা, পুকুর, খাল-বিলগুলো পাট জাগ দেওয়ার উপযোগী পানি ছিলনা। বাধ্য হয়ে অনেক চাষি পাট জাগের জন্য পুকুর ভাড়া নেয়। এতে করে তাদের পাট জাগের ভাড়া হিসেবে গুনতে হয় বিঘা প্রতি জমির পাটের জন্য ৭০০/১০০০ টাকা। তারপর শ্যালো ইঞ্জিন কিংবা মটোর দিয়ে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। অনেকেই পাটের জমিতেই উঁচু আইল বেঁধে সেখানেই জাগের ব্যবস্থা করেন। পাট জাগের পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায় এখনও অনেক চাষি অপেক্ষা করছেন কখন কার পাট জাগ হয়ে তার আঁশ ছড়াবেন, তখন তিনার পাট জাগ দেবেন। এমনও লক্ষ্য করা গেছে জাগের অপেক্ষায় রাস্তার পাড়ে পাট ফেলে রেখেছেন ৮/১০ দিন। তবে গত ৩ সপ্তাহ পূর্বে যারা পাটের আঁশ ছাড়িয়েছেন সেসব কৃষকের অনেকেই পাটের দাম ভাল পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন। তবে বর্তমানে জেলার আড়তদাররা প্রতি মণ পাট ক্রয় করছেন ২২-২৩’শ টাকা দরে বলে জানান গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের ইছারউদ্দীন।
সাহারবাটী গ্রামের আড়তদার আনিসুর রহমান জানান, বর্তমানে ২৩’শ টাকায় প্রতি মণ পাট ক্রয় করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী জেলায় পাটের মূল্য বেশি হলেও এখানে কম কেনো জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, অন্যান্য জেলার পাট মানের দিক থেকে ভালো। তাছাড়া এখানে সকলেই শুকনা পাট না এনে রসযুক্ত পাট আনছেন। এগুলো শুকোলে ওজনে আরও কমবে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষক-কৃষাণীরা পাটের আঁশ ছড়াতে ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের অনেকেই আড়তে গিয়ে পাট বিক্রি করছেন।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়,
চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের ৩টি উপজেলা জুড়ে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে কিন্তু চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।
গাংনী উপজেলায় পাট চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে কিন্তু চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে এবং মুজিবনগর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
জেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের পাট চাষি ইউসুফ আলী বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পাট গাছ পুড়ে যাচ্ছিল। পাট কাটার পর খাল-বিলে পানি ছিল না বলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পড়তে হয়েছিল বিপদে। ট্রলি ভাড়া করে ক্ষেত থেকে পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার জন্য পুকুরে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছিলো। এতে করে কিছুটা খরচও বেড়েছে।
মাইলমারী গ্রামের ময়েজউদ্দীন বলেন, পাটের ফলন বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ মণ করে হচ্ছে। তবে পাটের দাম ভাল না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে। ১ বিঘা জমির পাট আঁশ ছড়ানোর পর মাত্র ১২/১৩ হাজার টাকায় চাচ্ছে গ্রামের ব্যবসায়ীরা।
একই গ্রামের রহিদুল ইসলাম জানান, ১১ কাঠা জমির পাট ৮ হাজার টাকায় চাচ্ছে। পাটকাঠি বিক্রি করেও খরচ তোলা সম্ভব নয়।
পিরোজপুর এলাকার শাহজাহান বলেন, দেড় বিঘা পাট চাষ করে ছিলাম। খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তাই ক্ষেতেই বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে পাট বিক্রি করে দিয়েছি। এতে আমার লস হয়নি। পাট চাষের খরচ উঠে কিছু লাভ হয়েছে। বর্তমানে পাটের যে দাম, যদি কষ্ট করে পাট কেটে জাগ দিতাম তাহলে লাভ ভালো হতো।
কাজীপুরের ফয়সাল জানান, পানি না থাকায় মাঠ থেকে পাট এনে পুকুরে জাগ দিতে হয়েছে। স্থানীয় ব্যাপারীরা ভেজা পাট বিঘা প্রতি ১৩ হাজার টাকার উপরে নিতে চাচ্ছেনা।
আমঝুপি গ্রামের রুহুল আমিন জানান, যে কষ্ট পাট নিয়ে হলো আগামীতে আর পাট চাষ করা সম্ভব হবেনা।
মহিবুল ইসলাম জানালেন, ১ মাস পূর্বে পাট বিক্রি করেছি। বিঘা প্রতি জমির পাটে ২২ হাজার টাকা পেয়েছি। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকায় পুকুরে সেচের ব্যবস্থা করে পাট জাগ দিতে হয়েছিলো।
সোনাপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন জানান, পাট জাগের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ভৈরব নদীতে পাট জাগ দিয়েছেন। তবুও তারা লাভের মুখ দেখবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অনাবৃষ্টির কারণে পাটের কিছুটা ক্ষতি ও খাল-বিল ও ডোবাই পানি না থাকায় ক্ষেত থেকে পাট কেটে জাগ দেওয়ার জন্য কৃষকের কিছুটা সমস্যা হলেও পাটের দাম ভাল পাচ্ছে কৃষকেরা। এতে করে কৃষকেরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর