বাবার কোলে চড়ে কলেজে আসা সোনিয়ার মনে বাসা বেঁধেছে আগামী দিনে মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। কারো উপর নির্ভরশীল না থেকে আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে বড় হতে চায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া আক্তার (১৫)।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের উজানচরনওপাড়া গ্রামের রইস উদ্দিনের মেয়ে সোনিয়া। সোনিয়ার বড় ভাই জুয়েল মিয়া জানান মাত্র ৭ বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথমে পায়ে ব্যাথা অনুভূত হয় সোনিয়ার। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তাদের দেখালে ব্যাথার ওষুধ দেয় কিছু দিন ভালো থাকার পর আবার ব্যাথা শুরু হলে পুনরায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পর সোনিয়াকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। সেখানে নেয়ার পর ডাক্তাররা হাড় ক্যান্সার বলে জানান।
পরবর্তী সময়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা আর করানো সম্ভব হয় না। এরপর থেকে পা দুটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে অচল হয়ে যায়। সম্প্রতি আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজে বাবার কোলে চড়ে একাদশ শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে আসা সোনিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলতে ও মা বাবার কষ্ট দূর করতে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে।
স্কুলে কম ক্লাস ও কোন প্রকার প্রাইভেট ছাড়াই স্থানীয় উচাখিলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.২২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ন হয় সোনিয়া। দুই ভাই ও চার বোনের বড় পরিবারে খরচ সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তারপর সোনিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত বাবা রইস উদ্দিন।
একবার সোনিয়ার কৃত্রিম পা সংযোজন করার জন্য কিছু টাকা জোগাড় করলেও বাকী টাকার জন্য পা লাগানো সম্ভব হয়নি। তবু বাবা থেমে না থেকে মেয়েকে লেখা পড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজে নিয়ে আসতে কষ্ট হলেও মেয়ের ভষিৎতের কথা চিন্তা করে বাবার কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন তিনি। সোনিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন বাবা।