ড্রাগন ফল, কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এর চাষ এতোটা বেড়েছে যে,এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডুতে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। জানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ২৫ বছরের এক শিক্ষিত যুবক আলামিন।গ্রামের আকাঁবাকাঁ মেঠো পথ ধরে লালনের জনপদে বেড়ে উঠা এই তরুণ।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্গা ও নিজের জমিতে ড্রাগন চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন এই আধুনিক শিক্ষিত চাষী। বলছি হরিনাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের খলিশাকুণ্ডু গ্রামের মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী মোঃ আলামিন হোসেনের কথা। ড্রাগন ফল বিক্রি করে প্রতি চালানে তার আয় প্রায় ৯ লক্ষাধিক টাকা। তার এই সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহী হয়েছেন ড্রাগন চাষে। আলামিন হোসেনের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন ছিলো ব্র্যাক স্কুলে পরে ২০০৭ সালে ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি পাশ করে হরিণাকুণ্ডু সরকারী লালন শাহ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে বিকম পাস,সর্বশেষ ২০১৬ সালে এম,এ পাস করেন এই যুবক। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজের জমিতে ড্রাগনের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তার জমিতে প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার পিলারের পাশেই তিনি এই ড্রাগন গাছ রোপন করেছেন। আর এই পিলারের উপর লোহার রডের সঙ্গে মোটরসাইকেলের পুরানো টায়ার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আবার ফলও আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এই ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন।
সেই সাথে ৫০০ শত টাকা দামে চারার কাটিং বিক্রয় সরবরাহ করেন আগতদের মধ্যে। ড্রাগন ফ্রুট এর সত্ত্বাধীকারী মোঃ আলামিন হোসেন সব পাঠকের কাগজ দৈনিক দেশের কন্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, চাকরীর পেছনে না ছুটে, আমি ডিজিটাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ইউটিউব কৃষি ভিত্তিক চ্যানেল দেখে আমার পিতা মোঃ ইয়াকুব আলীর সহযোগীতায় বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের জন্য ২০২০ সালে ১১ শতাংশ জমিতে এই ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে বাগান শুরু করি। সঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে খুব কম সময়ের মধ্যেই ড্রাগনের ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে আমার ১ একর এক শতাংশ জমিতে এই ড্রাগন ফলের বাগান আছে। তারমধ্যে থায় রেড, ভিয়েতনাম রেড, আমেরিকা বিউটি,হোয়াইট, হলুদ এবং পিং রোজ উল্লেখযোগ্য। জানুয়ারী থেকে ফ্রেব্রুয়ারী এই সময়ের মধ্যেই চারা রোপন করতে হয়। আগে এইসব জমিতে পান চাষ করা হতো কিন্তু পান চাষে লচ হওয়ায় পানের বরজ ভেংগে দিয়ে এই দ্বীর্ঘমেয়াদী ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি।
এই ড্রাগন ফলের বাগান থেকে আমার প্রতি চালানে প্রায় ৯ লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। এদিকে একই গ্রামের মসলেম মণ্ডলের ছেলে কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, আমার তো মনে হয় এই চাষ-টা ভালোই। পানের বরজ চাষ করে লচ খাচ্ছি। তেমন কোনও অর্থের যোগান পেলে এখনই এই ড্রাগন ফলের বাগান করতাম। ইচ্চা আছে,টাকা নেই,ভবিষ্যতে টাকা হলে ড্রাগন ফলের বাগান করবো। হরিণাকুণ্ডু কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে,হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রথখোলা,ভেড়াখালী, নারায়নকান্দী, খলিশাকুণ্ডু বড়ভাড়া এবং শিতলী গ্রামে এই ড্রাগন চাষ হচ্ছে। মোট ২.৮ হেক্টোর ড্রাগন ফল চাষের আওতায় আছে। এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান, বারী ড্রাগন ১, কিংক রোজ, রেড ভেল ভেট জাতের ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন গাছে একটানা ৫ থেকে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন এই ফল চোখকে সুস্থ্য রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানো হার্ডের রোগসহ নানাধরনের রোগ প্রতিরোধ বাড়ায় । হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মাটি পর্যাপ্ত ড্রাগন চাষের উপযোগী। তিনি আরও বলেন উপজেলার সবচেয়ে বড় বাগান আছে চারাতলাতে। আমরা অসচ্চল ড্রাগন চাষীদের নানাধরনের সুযোগসুবিধা দিয়ে থাকি বলেও জানান এই কর্মকর্তা ।