হরিণাকুণ্ডুতে যৌতুকের দাবিতে চুল কেটে নির্যাতন,থানায় মামলা

হরিণাকুণ্ডু(ঝিনাইদহ) থেকে বাচ্চু মিয়া
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ২৪৫ বার পঠিত

  যৌতুকের জন্য চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন এক নারী। এ ঘটনায় গৃহবধূ রুমানা শারমীন (৩৩) বাদী হয়ে পাষন্ড যৌতুক লোভী স্বামী সাজেদুল রহমান রনিসহ তিন জনকে আসামী করে হরিণাকুণ্ডু থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। তথ্য সুত্রে জানাযায়,প্রথমে ফেসবুকে পরিচয়,কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রেমে আশক্ত হয়ে ২৭ (ডিসেম্বর) ২০২১ ইং তারিখে বিয়ের মাধ্যমে শেষ হয় তাদের প্রেমের পরিনয়। শৈলকূপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর গ্রামের মৃত শাখাওয়াত হোসেনের মেয়ের সাথে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাজেদুর রহমান রনি। রনি জোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি।

 

রনির দ্বিতীয় স্ত্রী এই রুমানা শারমীন,প্রতারণার মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথম স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো নেই এই বলে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন।এক পর্যায়ে সবকিছু মেনে নিয়ে বাধ্য হয় রনির সাথে সংসার করতে রুমানা। এরপর সংসার জীবনে প্রথম স্ত্রী ও দ্বিতীয় স্ত্রী সাথে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। হঠাৎ সংসারের সুখের প্রলোভন দেখিয়ে ৫ লক্ষ টাকার যৌতুক চাই স্বামী সাজেদুর রহমান রনি। রুমানা শারমীন সুখের কথা চিন্তা করে নিজের জমানো সঞ্চয়ের টাকা ও জমি বিক্রয় করে তার পাঁচ লক্ষ টাকা পুরণ করেন। এরপর থেকে ভালোই কাটছিলো তাদের সুখের সংসার। এমনি এক ক্ষণে তাদের কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান,কন্যা সন্তানের বয়স প্রায় এক বছর এক মাস।

 

যৌতুক লোভী স্বামী কিছুদিন পর আবারও যৌতুকের দাবি করে,রুমানা শারমীনের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতনের মাত্রা আর সইতে না পেরে তিন জনকে আসামী করে হরিণাকুণ্ডু থানাতে মামলা করেন এই গৃহবধূ। এদিকে রুমানা শারমীন দেশের কন্ঠ প্রতিবেদককে জানায়,আমি সংসারের সুখের জন্য আমার সবকিছু বিলিন করে দিয়েছি। আমার সঞ্চয়ের টাকা ও জমি বিক্রয় করে ৫ লক্ষ টাকা রনি-কে দিয়েছি। তারপরও আমার স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকী দিলে আমি হরিণাকুণ্ডু থানাতে ১২/১২/২০২২ ইং তারিখে একটি অভিযোগ দিই। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার মিমাংসা করেও কোনও ফল আসেনি।

 

কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার মাঝে মধ্যেই যৌতুক চেয়ে জাহিলিয়াত যুগের মতো পৈশাচিক নির্যাতন করে মারপিট করতেন তিনি। একদিন টাকার জন্য আমার বাবার বাড়ি যায়। টাকা না পেয়ে গত ২৬ (ডিসেম্বর) ২০২২ ইং তারিখে আমার স্বামীর বাড়িতে আসলে রনি,আমাকে ও আমার ১৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আনুমানিক মধ্যরাত ১ঃ৩০ মিনিটের দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বারের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে সমাধান হলেও ২৭/১২/২০২২ ইং তারিখে সন্ধ্যারাত্রী আবারও ২ লক্ষ টাকা চাইলে আমি দিতে রাজি না হলে আমাকে তালাকের হুমকী এবং মারপিট করে,নীলাফুলা রক্তাক্ত জখম করে।ওরা সবাই মিলে যুক্তি করে আমার মাথার চুল কেটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। আমার চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে আশেপাশের লোকজন এসে আমাকে ও আমার শিশু সন্তানকে রক্তাক্ত জখম দেখে তারা দ্রুত চিকিৎসার জন্য হরিণাকূণ্ডু হাসপাতালে ভর্তি করেন।

 

নির্যাতন আর সইতে না পেরে আমি অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ২৯/১২/২০২২ বিকালে থানায় একটি মামলা করি।আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই বলেও জানান এই গৃহবধু। হরিণাকুণ্ডু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে,রুমানা শারমীন নামের মেয়েটির বাম হাতের কুনুই এর উপরের দিকে আঘাত জনিত কারনে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে গত ২৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আট ঘটিকায় ভর্তি হয়। এঘটনায় সাজেদুল ইসলাম রনির সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি জানান,স্ত্রী রুমানা আমাকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো।পরবর্তীতে তার অস্বাভাবিক আব্দার এবং বিলাশ-বহুল আচরণের কারনে আমি তাকে তালাক দিয়েছিলাম।তালাকের কথা শুনে সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে এসব মিথ্যা কথা বলেছেন।

 

জোড়াদাহ ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,রনির দ্বিতীয় স্ত্রী রুমানা শারমিন ও তার কন্যা সন্তানের কাটাকুটি অবস্থা দেখে আমি সহ আরো কয়েকজন মিলে তাকে চিকিৎসার জন্য হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালে নিয়ে যায়।তবে বিষয়টা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়। হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান,এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইতিপূর্বে একটি অভিযোগ করেন।আবার পরবর্তীতে নারী নির্যাতনের একটি মামলাও করেন তিনি। মামলাটি নথীভূক্ত হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।অপরাধী যেই হোক না কেন মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর