ঝিনাইদহ প্রেলার অন্তর্তগ হরিণাকুণ্ডু উপজেলা একটি প্রত্যন্ত জনপদ। হরিণাকুণ্ডুকে ঘিরে রয়েছে আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, শৈলকুপা এবং ঝিনাইদহ সদর
যেখানকার জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা হরিণাকুণ্ডুর মানুষের তুলনায় বেশ উন্নত। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাথে অন্য উপজেলার সংযোগ
সড়ক রয়েছে মাত্র একটি এবং মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। উপজেলার ০৮ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার লোকসংখ্যা দুই লক্ষ আঠারো হাজার নয়শত পাঁচ(২,১৮,৯০৫) জন। অতীতে
এটি ছিলো চরমপন্থীদের অধিক্ষেত্র এবং বসবাসরত মানুষদের সাথে উন্নয়নের স্রোতধারার সম্পৃক্ততা ছিল না বললেই চলে। বর্তমানে সরকারের
ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোয়ায় এই ভীতি, কুসংস্কার এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ আলোর মুখ দেখলেও এখানকার
মানুষ এখনও অপরাধপ্রবণ, শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহী এবং প্রচলিত ধারণার কৃষি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থার যাপিত জীবেন অভ্যস্ত। সেই সাথে আধুনিককালে
যুক্ত হয়েছে আত্মহত্যা প্রবণতা, মাদকাসক্তি, স্মার্ট ফোনের যথেচ্ছাচার অপপ্রয়োগসহ সুদে কারবারির মরণ ফাঁদ। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই অঞ্চলের মানুষ
এখনও সাপে কাটার চিকিৎসায় ওঝার শরণাপন্ন হয়, ১৩ থেকে ১৫ বছরের মেয়েকে অভিভাবকরা অবলীলায় বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ী পাঠায় এবং প্রতিটি জীর্ণ-শীর্ণ নারী ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সে অন্তত একটি অপুষ্ট শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আছে সামাজিক কোন্দল এবং নারী নির্যাতনের অসংখ্য উদাহরণ। বেকারত্বের কষাঘাতে অনেকেই আদম ব্যবসায়ীর হাত ধরে হয়েছে নি:স্ব।
এসকল প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা জানান, জেলা প্রশাসক মনিরা বেগমের ধারণায় এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর দশটি বিশেষ উদ্যোগ এবং আমার গ্রাম
আমার শহর ধারণাকে উপজীব্য করে হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় একটি স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়।তিনি আরও জানান স্মার্ট ভিলেজ হবে বেকারত্বহীন,
সবার জন্য থাকবে নিরাপদ পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা,শতভাগ ব্যবহার হবে বাড়ীর আঙ্গীনাসহ চাষযোগ্য জমি, যুবকেরা পড়ে থাকবেন না মোবইলের স্ক্রিনে,হবে না কোন বাল্যবিবাহ,প্রতিষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বাচ্চার জন্মদানসহ সকলের জন্য চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে,রিনিউএবল শক্তির হবে সুষ্ঠু ব্যবহার।ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আরও নিশ্চিত করা হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নঃ সরকারী সকল অফিস পৌছে যাবে গ্রামের মানুষদের দোরগোড়ায়।নিশ্চিত হবে সরকারি সকল উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবহার,দপ্তরসমুহ সহজেই খুজে পাবে যোগ্য উপকারগ্রহীতা।এর সাথে থাকবে সামাজিক মূল্যবোধ,নিজস্ব ঐতিহ্য ও সৃংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-এ ভরপূর একটি অনন্য গ্রাম।
এ ধারণা বাস্তবায়নকল্পে বেছে নেওয়া হয়েছে উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের বাওড় পাড়ের হিজলী গ্রামকে, যেখানে ৪৯৩ জন পূরুষ ও ৫১৯ জন মহিলার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কম,২৩৯ জন পূরুষ লিখতে ও পড়তে পারেন এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে যা ২৬৮,অর্ধেকের সামান্য একটু বেশী।সর্বমোট মহিলা ৫১৯ এর মাঝে মাত্র ২জন চাকুরী করে আর পূুরুষদের ক্ষেত্রে ৪জন যেখানে মোট পূরুষ ৪৯৩ জন। কৃষিকাজই গ্রামের মানুষের মূল পেশা,যেখানে ১৬১ জন পূরুষ নিয়োজিত আছেন এই খাদ্য উৎপাদনের পেশার সাথে জড়িত এবং নারীদের ক্ষত্রে এই সংখ্যা মাত্র ৩ জন (সুত্রঃ বিবিএস)।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে একদম পিছিয়ে পড়া জনপদ। যাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একটা অনেক বড় কাজ হলেও,কাদা বা লোহা যখোন নরম হয়, তা যেমন ইচ্ছামতো আকার দেয়া যায় কিন্তুু ইট বা শক্ত লোহা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়, তেমনই এই অবহেলিত এবং অনুন্নত জনপদকে ঢেলে সাজানো খুব একটা কঠিন হবে না বলে আমরা উপজেলা প্রশাসন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। হিজলী গ্রামের আয়তন,ভৌগলিক অবস্থান,বসবাসরতদের জীবনমান,আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট সব মিলিয়ে হিজলীকে একটি স্মার্ট ভিলেজ হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্তের পর তা বাস্তবায়নে উপজেলা কৃষি অফিস, শিক্ষা অফিস,পশু সম্পদ কর্যালয়, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়, বিভিন্ন এনজিও সহ উপজেলা প্রশাসনের বেশীরভাগ দপ্তর রাত দিন কাজকরে চলেছে।
স্মার্ট ভিলেজ গড়ে তোলার উদ্যেশ্য জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা ও উপজেলা কৃষি অফিসার হাফিজ হাসান জানান, স্মার্ট হিজলী মডেল এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, মননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্দ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রটোকল তৈরী করা যা অনুসরণ করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভালো থাকা নিশ্চিত করা যায়। প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য সমুহের মধ্যে (১) ক্ষুদ্র/কুটির/হস্তশিল্পের কাজের ক্ষেত্র তৈরীকরে গ্রামবাসীদের বিশেষকরে নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি অফলাইন,অনলাইন উভয়ক্ষেত্রেই বাজার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্তকরণ।(২) ইন্টারনেট সংযোগ শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধকরণ। (৩) চাষযোগ্য জমি বিশেষ করে বাড়ীর আঙ্গীনার অনাবাদী জমিসহ শতভাগ জমিকে চাষের আওতায় এনে দেশের উৎপাদনশীলতাতে তরান্মিতকরণ। (৪) বাল্যবিবাহ বন্ধ করার মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্যের কল্যান এবং সুস্থ্যসবল ভবিষ্যত প্রজন্ম নিশ্চিতকরণ। (৫)কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যুবক শ্রেণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করা।(৬)ঝরে পড়া অটিস্টিক এবং এতিম বাচ্চাসহ সকল শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তরভূক্ত করা।(৭) সন্ত্রাস,নেশা এবং মোবাইল আসক্তি থেকে কিশোর কিশোরীদের দুরে রাখা।(৮) ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারী অফিসসমুহকে সেবাগ্রহীতাদের দোড়গোড়ায় পৌছে দেয়া। (৯) রিনিউবল শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
কর্মকর্তা দ্বয় আরও জানান এই উদ্যোগের আওতায় ৫০টিরও বেশী কার্যক্রম ইতমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে যার বেশিরভাগই সরকারী এবং বেশরকারী বিভিন্ন দপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ। তবে সঠিক সমন্ময় এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একটি কাজ অপর কাজকে তরান্মিত করছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো (১)নারীদের উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষতায়ন করতে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন এবং স্থানিয় নারী