উম্মে ফাতেমার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য… রিপোর্টে মিলল প্রমাণ : গণধর্ষণের পর ফাতেমাকে হত্যা

কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৫২৮ বার পঠিত

আলোচিত কুষ্টিয়ার মিরপুর বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে ফাতেমাকে গণধর্ষণের পর নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, উম্মে ফাতেমাকে হত্যা করার আগে দলবদ্ধভাবে ধর্ষনের শিকার হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের কারণেই তার যৌনাঙ্গের ভিতরে এবং বাইরে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষনের পরই তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।

 

 

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফাতেমার গলায় রশি দিয়ে পেঁচানোর কারণে গলার মধ্য বরাবর গোলাকার দাগ রয়েছে। বাম চোখের নিচেও আঘাতের কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। পেটে ২টি,গলায় ৫টি ও পিছন দিকে মাজার উপর মেরুদণ্ড বরাবর ৩টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণে তার শ্বাসনালী এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অপরদিকে ফাতেমার ঘাড়ের পিছন দিকে ৬টি ও ডান পায়ের পাতার উপর ৬টি মোট ১২টি স্থানে আগুন দিয়ে পোড়ানোর ক্ষতও রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে পোড়ানো। এছাড়াও শরীরের পিছন দিকে ঘাড়ের নিচ থেকে দুইপা পর্যন্ত ফুটন্ত তরল পদার্থ ঢেলে পোড়ানো হয়েছে। এতে তার শরীরের ৩৫শতাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

 

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১৩তারিখ দিবাগত ভোর ৪টার সময় এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এদিকে হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায় ১৪তারিখ সকালে লাশ উদ্ধার হলেও ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠানো হয় ওইদিন সন্ধ্যা ৬.৫৫মিনিটে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত রাতে করা হয় না। তাই স্কুলছাত্রী ফাতেমার মরদেহ পরের দিন অর্থাৎ ১৫জুলাই সকাল ১০টায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার প্রায় ৩০ঘন্টা পর লাশ ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তে উল্লেখ রয়েছে ফাতেমার মৃত্যু মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই হয়েছে। এ হত্যা মামলায় গত (০৯ নভেম্বর)ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

 

এ হত্যাকান্ডে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকার আলামতও মিলেছে। স্কুলছাত্রী ফাতেমার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার ডা, সুতপা রায়, মেডিকেল অফিসার ডা, রুমন রহমান ও কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ফাতেমার হত্যার পর থেকেই এ মামলার বাদী ও নিহত ফাতেমার বাবা সাইফুল ইসলামের দাবি ছিল,একজন আসামির একার পক্ষে এত নির্মম-নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানো সম্ভব নয়। এ মামলায় একজন আসামি গ্রেফতার করেই হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। লিখিত ওই আবেদন পত্রে মামলাটি সিআইডি’র হাতে হস্তান্তর করার দাবিও জানান তারা। সাইফুল ইসলাম আরও জানান, হত্যার প্রথম দিকেই পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণেও তাদের আপত্তি ছিল। ঘটনাস্থল থেকে ফাতেমার স্যান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এটি ফাতেমার স্যান্ডেল নয়, ফাতেমার স্যান্ডেল এখনও তাদের বাড়িতেই রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেমঘটিত ঘটনা বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল।

 

কিন্তু খুনির পরিবারের সঙ্গে তার মেয়ে এবং পরিবারের লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এটিও পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় আপন নামে একজন আসামি দাবি করে ”সে একাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে” এই মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে। কিন্তু ঘটনার পারিপার্শিকতা ও নৃশংসতা দেথে মনে হয় এই হত্যাকান্ডের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। ফাতেমা হত্যার পর কয়েকজন যুবক এলাকা ছাড়া ছিল। এমন তথ্যও পুলিশকে দেয়া হয়। ওইদিন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সময় সকালে বাড়ির সামনে একটি হাতের ব্যাচলেট ছেঁড়া অবস্থায় পড়েছিল। সেটিও পুলিশকে দেয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্পষ্ট হলেও এর সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।

 

এই জীবনে আর কিছুই চাই না। শুধু আমার আদরের একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এদিকে এ হত্যাকান্ডের পর কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম প্রেসবিফিংও করেছিলেন। সেখানে তিনি এ হত্যাকান্ড প্রেম সংক্রান্ত কারণে সংগঠিত হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর থানার ওসি(তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস বলেন,এটা তদন্তধীন বিষয়। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি মেডিকেল রিপোর্ট। ডিএনএ রিপোর্ট আসার পরই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ভাঙা বটতলা এলাকায় একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উম্মে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে পুলিশ মিরপুর পৌরসভার কুরিপোল মধ্যপাড়া এলাকার রংমিস্ত্রি মিলনের ছেলে আমলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আপন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর