ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কে ২ মাসে ঝরেছে ১২ প্রাণ

নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪
  • ২৪ বার পঠিত

কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দরের সড়কটির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সড়কটিতে গত দুই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রায় ১২ জনের। একের পর এক এই সড়কে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন তরতাজা মানুষ। আবার অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ফলে এই সড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি সকালে ভূরুঙ্গামারী সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের পাটেশ্বরী তালতলা ব্রিজের ওপর ভটভটি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা ছেলের মৃত্যু হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই সড়কের পাইকেরছড়া ইউনিয়নের কোম্পানি মোড় এলাকায় অবৈধ ভটভটির ধাক্কায় আরও দুইজন নিহত হন। এর আগে একই সড়কে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভুরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের পাথারি মসজিদ বাজার এলাকায় মাদরাসা পড়ুয়া ছেলেকে খাবার দিতে যাওয়ার সময় ঢাকাগামী একটি নৈশ কোচের চাপায় মহিজউদ্দিন নামের এক ব‍্যক্তির মৃত্যু হয়।

আবারও ২২ ফেব্রুয়ারি ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়ক‍ের বাঁশেরতল এলাকায় মাইক্রোবাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু ও নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই দিন ওই সড়কের মধ্য কুমারপুর বাজার তেলের পাম্পে মোড়ে অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিটন নামের এক মোটরসাইকেল চালক গুরুতর আহত হন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে।

২৩ ফেব্রুয়ারি ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কে ধরলা সেতুর পাশে ভূরুঙ্গামারী থেকে ছেড়ে আসা পাথর বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুড়িগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ‍্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়।

এর আগে ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের আন্ধারিঝাড় বাজারের জাবের মন্ডলের চাতালের সামনে ঢাকাগামী নৈশ কোচের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে নিহত হন। এর আগে ওই এলাকায় ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী শালী ও দুলাভাই নিহত হন।

সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় ভূরুঙ্গামারী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি নৈশ কোচের সঙ্গে আন্ধারিঝাড় বাজারে প্রবেশের আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় ওই বাসের হেলপার আসাদুল হক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া গত শনিবার (৯ মার্চ) কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী সড়কের পাটেশ্বরী এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসের চাপায় এক ভিক্ষুক নিহত হন।

তবে সচেতন মানুজন বলছেন, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারীর সড়কের উন্নয়ন কাজ করার ফলে রাস্তাটির প্রশস্ত বেড়েছে। যার ফলে অতিরিক্ত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। এ কারণেই হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা একটু বেশি ঘটছে। ওই সড়কে চলা বিভিন্ন চালকদের সচেতনতা বাড়াতে পারলে হয়তো দুর্ঘটনা কিছুটা কমে আসতে পারে।

কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের কুমারপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন প্রতিনিয়ত এই সড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাচ্ছি আমরা। রাস্তাটির প্রশস্ত বৃদ্ধির কারণে চালকরা অতিরিক্ত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

এলাকাবাসী আমজাদ, রবিউল, শাহআলম ও এরশাদুল হক বলেন, রাস্তায় এতো পরিমাণ অটো রিকশা ও তিন চাকার ভটভটি বেড়েছে যার কারণে হাটা চলাই মুশকিল। এদেরকে প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স এর আওতায় আনা উচিত। এদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা।

নিহতের স্বজনরা বলছেন, সড়কে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যান বৃদ্ধি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই এই সড়ক এমন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সোনাহাট ডিগ্রি কলেজের অধ‍্যক্ষ বাবুল আক্তার জানান, সড়কে প্রশাসনের কঠোর তদারকি ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং চালক, যাত্রীসহ পথচারীদের সচেতনার মাধ্যমে আমরা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পারি। একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না, তাই আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করি।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইনসপেক্টর বানিউল আনাম বলেন, আমরা এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করছি। সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ী ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা দিচ্ছি। এছাড়া আগামি সাত দিনের মধ‍্যে ভূরুঙ্গামারী-রায়গঞ্জ সড়কের মধ‍্যবর্তী জায়গায় পাঁচটি দপ্তরের সমন্বয়ে ট্রাফিক বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে একটি বড় ধরনের সভার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এজন‍্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর