*দেশকে স্বনির্ভর করতে প্রাপ্য রাজস্ব দিন,অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভ্যাট অপরিহার্য —মেয়র ডা. শাহাদাত*

মোঃ শহিদুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২৩ বার পঠিত

*দেশকে স্বনির্ভর করতে প্রাপ্য রা

রাষ্ট্রীয় উন্নয়নধারা ও জাতীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রাপ্য রাজস্ব যথাসময়ে পরিশোধ করা নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব—এ কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন,“রাজস্ব নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা।”

বুধবার রেডিসন ব্লু হোটেলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমিশনারেট, চট্টগ্রাম আয়োজিত ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ–২০২৫ উপলক্ষে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

১৯৯১ সালের সিদ্ধান্ত—আজ জাতীয় অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি মেয়র তাঁর বক্তব্যে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন-“১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক সংস্কার ছিল না; এটি ছিল অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার দূরদর্শী পথরেখা।”

তিনি উল্লেখ করেন—বর্তমানে জাতীয় কর আদায়ের ৩৮ শতাংশই আসে ভ্যাট থেকে,একক উৎস হিসেবে ভ্যাট সর্বোচ্চ রাজস্ব অবদানকারী খাত,অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে ভ্যাট আজ রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম স্তম্ভ

মেয়রের বক্তব্যে রাজনৈতিক রুচিকর মেরুকরণ অতিক্রম করে নীতিগত সঠিক সিদ্ধান্তকে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে—“রাষ্ট্রের কল্যাণে গৃহীত উদ্যোগ দল-মতের ঊর্ধ্বে। ভ্যাট সেই সঠিক সিদ্ধান্তের এক অনন্য উদাহরণ।”

প্রধান অতিথি ব্যবসায়ী সমাজের উদ্দেশে বলেন—
“সঠিকভাবে ভ্যাট প্রদান শুধু আইনের বাধ্যবাধকতা নয়—এটি ব্যবসার নৈতিকতা। গোপনীয়তা বা অনিয়মের ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

মেয়র স্পষ্ট করে বলেন—ব্যবসায়ীদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে নিয়মিত রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক,পণ্য ও সেবা গ্রহীতাদের ভ্যাট চালান নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে,

তিনি আরও জানান—“স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়, আর সেই উন্নয়ন ভোগ করে সাধারণ মানুষ।”

সভায় বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য: রাজস্ব ব্যবস্থার কঠিন বাস্তবতায়,সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন—মোহাম্মদ লুৎফর রহমান,প্রেসিডেন্ট, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনাল,মোঃ আবুল কালাম আজাদ, কমিশনার, কর অঞ্চল–১,মোঃ ফজলুল হক, কমিশনার, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল),মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, কমিশনার, কাস্টমস হাউস, চট্টগ্রাম

অতিথিবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব কাঠামোর বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন—“দেশের বাজেট বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার ৮০ শতাংশ অর্থায়ন এনবিআর-এর মাধ্যমে আসে, যার মধ্যে ভ্যাটের অবদান এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। তাই ভ্যাট ব্যবস্থা দুর্বল হলে জাতীয় অর্থনীতিও দুর্বল হবে।”

তাঁরা আরও বলেন—সময়মতো নিবন্ধন ব্যবসার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে গ্রাহকের আস্থা বাড়ায়,ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা কমায়,অতিথিদের বক্তব্যে সর্বসম্মতভাবে উঠে আসে—“ভ্যাট চালান গ্রহণ এখন সচেতন নাগরিকের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।”

কর–জিডিপি অনুপাত: সতর্ক সংকেতেঃ স্বাগত বক্তব্যে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রাম–এর কমিশনার মোঃ মাহফুজুল হক ভূঁঞা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন—“২০২৪–২৫ অর্থবছরে কর–জিডিপি অনুপাত মাত্র ৬.৬৭%—একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”তিনি অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর জোর দেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন,ড. আবু নূর রাশেদ আহম্মেদ, মহাপরিচালক, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি। তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কাঠামোর চ্যালেঞ্জ, করপোরেট অনিয়ম, অনলাইন ভ্যাট ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রভাব বিশদভাবে তুলে ধরেন।

সভাপতি শওকত আলী সাদী বলেন—“জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভ্যাট ব্যবস্থাকে,ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আধুনিক করছে। রাষ্ট্রীয় রাজস্ব সংগ্রহে স্বচ্ছতা ছাড়া এগোনোর কোনো বিকল্প নেই।”তিনি আরও জানান-
অনলাইন,নিবন্ধন,ই-রিটার্ন,ই–অডিট,স্মার্ট চালান,শহরের প্রধান বাণিজ্য এলাকায় সচেতনতা বুথ,এসব কার্যক্রম নাগরিক সুবিধা বাড়িয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে—চট্টগ্রাম কমিশনারেট এ বছর ‘মান্থ অব রেজিস্ট্রেশন’-এ সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে; ৭ হাজার অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। সভাপতি কঠোর ভাষায় বলেন—“রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থায় অনিয়মের স্থান নেই। করদাতার সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর