বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৪নং সতর্ক সংকেত থাকায় আজ শুক্রবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ৩নং সংকেত ঘোষণার পর বিকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নোটিশ দেন।

জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ। তবে তারা নিরাপদ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে রাত্রিযাপনের জন্য থেকে গেছেন। হঠাৎ বৈরি আবহাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারা আটকে গেছে।

স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত তাদের পরিচ্ছন্নভাবে হয়রানি মুক্ত আতিথেয়তা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। আমি নিজেই রাতে এবং সকালে হোটেলগুলোতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে পর্যটকদের আতংকিত না হতে আশ্বস্ত করেছি।

চেয়ারম্যান আরো বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল কয়েকটি হোটেল রয়েছে। কঠিন দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হবার কিছু নেই। সংকেত বাড়লে আমরা তাদের সেখানে এসব স্থানে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করব।

কেয়ারি সিন্দাবাদ ও ক্রুজের ইনচার্জ মো. শাহ আলম জানান, নৌপথে জাহাজ চলাচল স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে সংকেত বেড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই জাহাজ সেন্টমার্টিনের পথে যায়নি।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানায়, সাগরে এখন ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধসহ সমুদ্রের সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে বলা হয়েছে।

জাহাজ চলাচল বন্ধ, সেন্টমার্টিনে আটকা ১২০০ পর্যটক

ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সারাদেশের শনিবারের (৯ নভেম্বর) জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। সব সরঞ্জাম নিকটস্থ ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে বা বড় ভবনে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। একাধিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার জেএসসি ও জেডিসির গণিত বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে সাতটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন রাত সোয়া দশটার দিকে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘সারাদেশের সব বোর্ডের জেএসসি ও জেডিসি পরীাক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: কামাল উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, শনিবারের স্থগিত করা জেডিসি পরীক্ষাটি ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ইউনুস বলেছেন, বরিশাল বোর্ডের অধীনে শনিবারের জেএসসি পরীক্ষাটি ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার গণিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

আবহাওয়াা খবরে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

এদিকে বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে কক্সবাজারে ৪ নম্বর সংকেত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় সারাদেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপ‌রিবহন কর্তৃপ‌ক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার এ ঘোষণা দেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার (০৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার ভোর থেকে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিমি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজ এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিন্মঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা

শনিবারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা স্থগিত

সারাদেশেই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইন অমান্য করেই চলেছে ধূমপায়ীরা। ধূমপায়ীদের কারণে সুরভী উদ্যান সহ মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে নির্মল পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে আসা বিনোদনপ্রেমিদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এসব স্থানে প্রতিনিয়তই আইন অমান্য করলেও সেসব ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনোদনপ্রেমিরা। একই সাথে ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শিশুসহ সকলকে রক্ষা করতে মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষনিক আইনপ্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিনোদনপ্রেমিরা। নয়তো, অদূর ভবিষ্যতে যত্রতত্র ধূমপানের কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষশূন্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। রংপুরে বিনোনদপ্রেমিদের বিনোদনের অন্যতম স্থানগুলো চিকলী পার্ক, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সুরভি উদ্যান। রংপুর নগরীর পার্কগুলো নৈস্বর্গিক দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবেই। চিকলী পার্ক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য অবলোকনে শিশু থেকে বৃদ্ধদের উপচেপড়া ভিড় যেন লেগেই থাকে। কিন্তু নির্মল চিকলী পার্কের ¯িœগ্ধ-কোমল বিশুদ্ধ বাতাস এখন ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিদিনই নির্মল বিনোদন নিতে আসা শিশুসহ হাজারো বিনোদনপ্রেমিরা ক্রমেই ধূমপায়ীদের বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়ার কবলে পড়ে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিছুদিন রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিনোদনপ্রেমিদের পদচারণায় মুখর রয়েছে। কিন্তু এখন নির্মল পরিবেশে থাকা হাজারো মানুষের ভিড়ের মধ্যেই ধূমপায়ীদের ধূমপানের দৃশ্য হতবাক। রীতিমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোষাকেও (ইউনিফর্ম) ধূমপান করতে দেখা যাচ্ছে। যে দৃশ্য হতবাক হয়ে মূর্তির ন্যয় দাঁড়িয়ে পড়ছে সকলেই। চিকলী পার্কে বেড়াতে আসা বিনোদনপ্রেমিদের ভাবিয়ে তুলেছে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা মহানগরীর কামাল কাছনা এলাকার বাসিন্দা মোঃ আলতাফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চিড়িয়াখানায় নির্মল বিনোদনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষের সমাগম বিরাজমান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক প্লেসে কর্মজীবিদের সাথে পাল্লা দিয়ে স্কুল ড্রেসে থাকা কিশোর কিশোরীরাও দেদারছে ধূমাপান করছে, অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসক সংশ্লিষ্টদেরও কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন বসার স্থান ও ফাস্টফূডের দোকানগুলোতে নানা বয়সের মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলো। পাশেই বসে স্কুল-কলেজ পডুয়া শিক্ষার্থী, স্থানীয় টোকাইসহ নানা বয়সী ধূমপায়ীরা ধূমপান করছে। এখনই কয়েকজন কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীকে জনসমাগম স্থলে ধূমপান করতে দেখা গেছে। পাবলিক প্লেসে কেন ধূমপান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অনিক নামে তাদের একজন বলে উঠলেন, কিসের পাবলিক প্লেস। খোলামেলা জায়গায় বসে সিগারেট খাচ্ছি এতে আবার ক্ষতির কী হলো। তাদের মত অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে কিন্তু কেই তাদেরকে ধূমপান করতে নিষেধ করার সাহস পাচ্ছে না। শফিক নামে সেখানে বেড়াতে আসা এক বিনোদনপ্রেমী বলেন, চিড়িয়াখানা, সুরভি উদ্যান, চিকলীপার্ক কেন রংপুরের প্রেসক্লাব, সুপারমার্কেট, জেলা পরিষদ মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স যেখানেই আপনি যাবেন এসব ধূমপায়ীদের দেখা মিলবে। এরা অধিকাংশই স্থানীয় কিশোর গ্যাং কিংবা লোকাল লোকজন।

রংপুরে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ধূমপায়ীদের কারনে স্বাস্থ্যরঝুঁকি