রাস্তা কাটার নামে উন্নয়ন ধ্বংস : ওয়াসাকে আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি মেয়রের

মোঃ শহিদুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২৬ বার পঠিত

 

চট্টগ্রাম নগরীতে অনুমতি ছাড়া ওয়াসা কিংবা অন্য কোনো সংস্থা এক ইঞ্চিও রাস্তা কাটতে পারবে না—এমন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “রাস্তা কাটার নামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ধ্বংস ও নগরবাসীর দুর্ভোগ আর সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চসিক পিছপা হবে না।”

রোববার দুপুরে টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এ কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন।

সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, “ওয়াসা সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা কাটছে। এতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ নষ্ট হচ্ছে, জনগণের কষ্ট বেড়েই চলেছে। কোথায় নতুন টেন্ডার হচ্ছে, কোন সড়ক সংস্কারের আওতায় আছে—এসব তালিকা আমরা দেব। তারপরও যদি অনুমতি ছাড়া কাটাকাটি হয়, সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিটি সড়ক খননের পর ওয়াসাকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে হবে—কোথায় কত ক্ষতি হয়েছে এবং সংস্কারে আসল খরচ কত। অন্যথায় দায়ভার একতরফাভাবে নেবে না সিটি কর্পোরেশন।”

ওয়াসার দাবি, তারা ৯৩ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে ৪৮ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য চসিককে হস্তান্তর করেছে এবং এর জন্য ৮২ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু মেয়রের মতে, “ওয়াসার দেওয়া অর্থের দ্বিগুণ-তিগুণ খরচ করতে হচ্ছে রাস্তা সংস্কারে। অনেক জায়গায় নতুন রাস্তা নির্মাণ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আবার ওয়াসা খনন শুরু করেছে। এতে শুধু জনদুর্ভোগ নয়, কোটি কোটি টাকার উন্নয়নও ধ্বংস হচ্ছে।”

ভাঙা রাস্তা মেরামত ও জলাবদ্ধতা নিরসনঃ-প্রকৌশল বিভাগকে মেয়র নির্দেশ দেন—গুরুত্বপূর্ণ সড়কের গর্ত ও ভাঙা অংশগুলো দ্রুত প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি উন্নয়নকাজে কার্যকর ড্রেনেজ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে নগরবাসী মুক্তি পায়।

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রকোপ আবারও বেড়ে যাওয়ায় মেয়র স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল অফিসার ও প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।”

মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি জানান, নতুন ওষুধ বিটিআই অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহ থেকেই মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ শুরু হবে।

মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, “চট্টগ্রামে ৪ থেকে ৫ লাখ ট্রেড লাইসেন্স থাকার কথা, অথচ আছে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার। কোনো অজুহাত চলবে না। নগরীতে ব্যবসা করলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বড় বড় ডিফল্টাররা বছরের পর বছর হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় না। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হবে না। জন্মসনদ বা অন্য সেবার সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্স জড়ানো যাবে না।”

প্রয়োজনে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য শিগগিরই ‘রাজস্ব সপ্তাহ’ চালুর ঘোষণা দেন তিনি। এতে ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর পরিশোধ করতে পারবেন। তবে ইচ্ছাকৃত ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

নাগরিক সেবাকে আরও কার্যকর করতে সিটি কর্পোরেশন শিগগিরই চালু করছে “আমার চট্টগ্রাম” অ্যাপস। এর মাধ্যমে নাগরিকরা রাস্তার গর্ত, ময়লার স্তূপ, জলাবদ্ধতা বা অন্যান্য সমস্যা ছবি তুলে সরাসরি চসিককে জানাতে পারবেন। এতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে বলে জানান মেয়র।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর