শীর্ষ চরমপন্থি লিপ্টনের জামিন বাতিল দাবিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া কুমারখালীর শিল্পপতি দানবীর
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৭ বার পঠিত

 

 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আলোচিত চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের শীর্ষ নেতা জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন। গত ৬ জুন রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের নিজ গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর একটি দল। ওই অভিযানে লিপটনের হেফাজত থেকে ৬টি বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। শীর্ষ এই সন্ত্রাসীকে ৮ সেপ্টেম্বর তার জামিন মঞ্জুর করেন কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ ছুমিয়া খানম। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শীর্ষ চরমপন্থির জামিন হওয়ায় অসন্তোষ, ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সচেতন মানুষ। অবিলম্বে তার জামিন বাতিলের দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ কর্মসূচি পালন করছেন হাজারও মানুষ। এ সময় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। জাহাঙ্গীর কবির লিপটন (৪৮) কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। লিপটন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা আছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে শতাধিক জিডি আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ও সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করে আসছিল লিপটন। সরকার পতনের পর কিছুদিন গা-ঢাকা দেন তিনি। পরে বিএনপির নেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। পরে তাকে বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। জানা গেছে, ৬ জুন রাতে সেনাবাহিনীর একটি আভিযানিক দল লিপটনের বাড়িতে অভিযান চালান। তাদের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশের একটি দলও উপস্থিত ছিল। অভিযান চালিয়ে লিপটন ও তার তিন সহযোগী রাকিব, লিটন ও সনেটকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৬টি বিদেশি পিস্তল, একটি লং ব্যারেলগান, ১০টি ম্যাগাজিন, ১৪০টি গুলি, ৮টি শিল্ড, ৬টি বল্লমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একাধিক হত্যা, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের মামলার আসামি জাহাঙ্গীর কবির লিপটনকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করে সেনাবাহিনী। তার ভাই উপসচিব আলমগীর কবির ওরফে বাইরন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিন মাসের মধ্যে জামিন করেছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে জামিন বাতিলের দাবি করছি। তারা আরও বলেন, তালিকাভুক্ত শীর্ষ চরমপন্থি জাহাঙ্গীর কবির লিপটন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে সে নিজেকে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে সব অপকর্ম চালিয়ে যায়। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে দলবল নিয়ে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা করে, একাধিক জুলাই হত্যায় আসামির তালিকায় তার নামও রয়েছে। বক্তারা বলেন, লিপটনের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলামপুর ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের মামুন একাধিক হত্যা, অপহরণ ও মাদক মামলায় জেলে রয়েছে। এলাকার চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর যোগাযোগ। সে জেল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে, এলাকা থেকে চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের সঙ্গে নিয়ে নানা অপতৎপরতা চালানোর হুমকি দিচ্ছে।
নব্বইয়ের দশকে কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগ করা এই লিপটন পরবর্তী সময়ে গণমুক্তিফৌজে নাম লেখায়। কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে জামাই বাবুসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তার অপরাধ জগত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের জেলায়। পরে জাসদ গণবাহিনীতে যোগ দিয়ে মাফিয়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি র‌্যাবের নাম ভাঙিয়ে অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকজনকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার মতো বহু ঘটনা ঘটালেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। গত ৬ জুন লিপটনের বিচার দাবিতে শহরের এনএস রোডে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন হাজারও মানুষ। সেখানে লিপটনের নির্যাতন-অত্যাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। গত ১৫ জুন আবারও লিপটনের বিচার দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে স্মারকলিপি দেন সাধারণ মানুষ। লিপটনের নির্যাতনের শিকার শত শত নারী-পুরুষ বিচার দাবিতে অংশ নেন। বুধবার কুষ্টিয়া শহরে বিক্ষোভ শেষে আবারও সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তারা বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক শীর্ষ চরমপন্থি লিপটনের জামিন বাতিল করেতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর