ঝিনাইদহে নকল জিংক সালফেট উৎপাদন কারখানা সন্ধান লাভ: লাইসেন্স বিহীন চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ২৭৬ বার পঠিত

 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় একটি নকল সার কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সরকারের অনুমোদন ব্যতিরেখেই রাতের আধারে একটি চাউলের চাতালে নকল সার উৎপাদন করে অন্য কোন কোম্পানির নামে বাজার জাত করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।সদর উপজেলার ১৬ মাইল,কোলা নামক স্থানে একটি নামহীন চাতালের এক পাশে প্রায় ২ বছর ধরে এই নকল সার উৎপাদন করে আসছে। এই গ্রামের আফজাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি এর আগে সিডো নামে একটি এনজিও পরিচালনা করতেন।শনিবার দুপুরে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চাতালে গিয়ে দেখা যায় ৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের কাছে এই সার কোম্পানির নাম কি? সাইনবোর্ড কোথায়? মালিক কে? জানতে চাইলে কোম্পানির নাম বললেও মালিকের নাম জানায়নি, দেখাতে পারেনি কোন সাইনবোর্ড। এই কারখানায় কোন ল্যাব নেই।যারা কাজ করছেন এদের মধ্যে তুহিন হোসেন ও মুরাদ হোসেনের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ছোট বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তারা ২ জনেই মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন পায়। এছাড়া মঙ্গল হোসেন ম্যানেজার ও কোলা গ্রামের শফি উদ্দিন নামের আরও দুজনের দেখা পাওয়া যায়নি। তারা দস্তা সার উৎপাদন করে। প্রতিমাসে কয়েক টন করে ভেজাল ও নকল সার ঢাকা সহ দেশের অন্য অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে কোলা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। জানাগেছে এর আগেও কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত এই কারখানায় হানা দেয়। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি তাদের কার্যক্রম। তারা অন্য কোম্পানির সালফেট(চাইনা সালফেট) কিনে অ্যাস ও সালফিউরিক এসিড মিশিয়ে দস্তা সার তৈরি করে। কিন্তু কোন ল্যাবেই এই সারের মান পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়না। সব কিছু নির্ধারণ করেন শ্রমিক তুহিন ও মুরাদ। যারা ক্লাস ফাইভ পর্যন্তও লেখা পড়া জানেন না। সালিফিউরিক এসিড,অ্যাস ও সালফেট সারের দ্রবনে কি রাসয়নিক প্রতিকৃয়া তৈরি হতে পারে এই বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। সরকারি কোন অনুমোদন আছে কিনা জানতে রবিবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে দেখা পাওয়া যায় আফজাল হোসেনের। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার সকল লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু ঢাকায়। তার দাবি তিনি এখন সার উৎপাদন করছেন না। যখন করবেন তখন দেখাবেন।এই বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল করিম জানান,আমার জানামতে এই কারখানায় এখন সার উৎপাদন হচ্ছে না। আমাদের লোক গত সপ্তাহে দেখে এসেছে।উনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে একটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবরে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ রফিকুল আমিন।চিঠিতে উল্যেখ রয়েছে ১৬-০৮-২০২০ ইং তারিখে জিংক সালফেট(হেপ্টা) তৈরি ও বাজারজাত করণের জন্য আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯-১২-২০২০ইং তারিখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় সঠিক না হওয়ায় পূণরায় পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়।কিন্তু লাইসেন্স না পেলেও তিনি সরকার ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে টন টন নকল সার উৎপাদন করে নামে বেনামে বিক্রি করে যাচ্ছেন। তিনি বাজার থেকে এসকে এন্টারপ্রাইজের উৎপাদিত পটাসিয়াম সালফেট কিনে।কিন্তু সেই কোম্পানির কাছ থেকে সার আমদানির কোন কাগজপত্র নেই। কাঠের গুড়ো থেকে ছাই তৈরি করে এসিড মিশিয়ে জিংক সালফেট উৎপাদন করে যাচ্ছেন। প্রতিমাসে ৪ জন কর্মীকেই ৬০ হাজারের উপরে বেতন দিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি ল্যাব টেকনিশিয়ানও রয়েছে তার।কিন্তু নেই এসিড মজুদের কোন সনদ,রাসায়নিক বর্জ নির্সারণের কোন ব্যবস্থা,নেই ল্যাব,পরিবেশের ছাড়পত্র,সাইনবোর্ড। চালাতের অব্যবহৃত কক্ষেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপপরিচালক আনোয়ার সাদাত জানান, আমি নতুন এসেছি। এই রকম সার কারখানা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে যদি নকল সার উৎপাদন করে তবে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।অবশ্যই সার ল্যাবে পরীক্ষা করে গুনগত মান যাচাই করা হবে। কোলা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, এখন সার দিয়েও ফসলে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। অধিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। নকল সারের কারণেই এমন হচ্ছে। পরিমানে বেশি লাগছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। মাটির গুনাগুনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর